আড্ডা, গান, গল্প, সবেতেই বাঙালির ‘চা’ই চাই! সকালে ঘুম চোখে গলাটা একটু ভিজিয়ে নিতে কিমবা কাজের মাঝে একটু চাঙ্গা হতে চা-এর বিকল্প আর কী আছে? চা-এর সঙ্গে বাঙালি তথা ভারতীয়দের রোমান্সটা চিরকালীন। রাজনীতি থেকে রাজকার্জ, কিমবা ফুটবল থেকে ফ্যাশন, সব মহলেই অবাধ বিচরণ তার। ভারতের নানা প্রান্তে নানা রকমের চা জনপ্রিয়।
শুধু ভারত কেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চা অনেকের কাছে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ । তবে জানেন কি, এই চায়ের জন্য গোটা একটা দিন রয়েছে । যাকে বলা হয় আন্তর্জাতিক চা দিবস (International Tea Day 2022)। প্রতি বছর ২১ মে এই দিনটি পালন করা হয় ।
বিশ্বের চা উৎপাদনকারী দেশগুলো প্রথম দিকে ১৫ ডিসেম্বর বিশ্ব চা দিবস পালন করা শুরু করে । সেটা ছিল ২০০৫ সালের কথা । ২০২০ সাল থেকে সারা বিশ্ব জুড়ে ২১ মে আন্তর্জাতিক চা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে ।এ বছরের আন্তর্জাতিক চা দিবসের থিম 'ওম্যান ইন দ্য টি সেকটর। আমরা তো চায়ে চুমুক দিয়েই খালাস। কিন্তু এর পেছনে যাঁদের নিরলস শ্রম, উদয়াস্ত খাটনি, মাথার ঘাম পায়ে ফেলা, তাঁদের অধিকাংশই মহিলা। চা শিল্পে মহিলাদের অবদানকে মাথায় রেখেই এই থিম বেছে নেওয়া।
পাশাপাশি ভারতের দার্জিলিং, অন্যদিকে, অসম জুড়ে চায়ের চায়ের চাষ হয় । ভারতের অর্থনীতির অনেকটা অংশজুড়ে চা । অথচ চা শ্রমিকদের নিত্যযাপনের সঙ্গে জুড়ে অনেক বঞ্চনার ইতিহাস। পর্যাপ্ত মজুরির জন্য চা শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন বহু আগে থেকেই, নানা সময়ে দাবিয়ে দেওয়া হয়েছে সে আন্দোলন। আমরা যারা চা বিলাসী, তাঁদের অগোচরেই থেকে গেছে একটি কুঁড়ি দু'টি পাতার আড়ালে চাপা পড়া কত কান্না।
আমাদের দেশে চা শ্রমিকদের মজুরি বেশ কম। গত বছর চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ২৩২ টাকা থেকে বেড়েছে, তবে বর্ধিত মজুরিও যথেষ্ট নয়, দৈনিক ২৫০ টাকা। দিনে ২৪ কেজি চা পাতা তুলে মাত্র ১৫০ টাকা।
এবার আসা যাক নানা রকমের চা-এর চর্চায়।
সাধারণত উত্তর ভারতের মানুষ পছন্দ করে বেশ মশলাদার চা। ঘন দুধ দিয়ে জ্বাল দেওয়া। সঙ্গে লবঙ্গ, দারচিনি, এলাচ, তেজপাতা থাকলে তো কথাই নেই। এর পেছনে অবশ্য আবহাওয়ার ভূমিকা রয়েছে দস্তুর। উত্তর ভারতে ঠাণ্ডা বেশি, ঘন দুধ দিয়ে বানানো মশলাদার চা পানেই আরাম বেশি।
গোলাপি নুন চা দিয়ে গলা ভেজাতে চান? পুরনো দিল্লির জাম্মা মসজিদের কাছাকাছি খুব জনপ্রিয় এই চা। স্বাদে নোনতা, রঙখানা বাহারি। গলার সঙ্গে মনও ভিজবে ভরপুর। তবে পিঙ্ক টি আসলে কাশ্মীরের।
চায়ের মধ্যে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর এই গ্রিন টি। এতে ক্যাফিন একদম কম মাত্রায় থাকে। এই চায়ের পাতা তুলে , শুকিয়ে, সেকে নিয়ে তৈরি করা হয়। তুলসী, আদা, এলাচ, মধু এবং মিন্ট এসব ফ্লেভারে পাওয়া যায়। হাই ব্লাড সুগার রোগীদের জন্য বেশ উপকারী এবং এটি অতিরিক্ত মেদ কমাতেও সাহায্য করে।
বে-গুণ নয়, তবে বেগুনি রঙের চা, পার্পল টি। হার্টের ক্ষেত্রে বেশ উপকারী এই চা। আবার সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করতেও সাহায্য করে। ভারতে প্রথম বার এ চায়ের চাষ হল অরুণাচলপ্রদেশের ডনিও পোলো টি-এস্টেটে। এই প্রজাতির চা আসলে হয় আফ্রিকার কেনিয়ায়।
কাজের চাপে আজকাল অধিকাংশ মানুষই ডিপ্রেশন বা মানসিক ক্লান্তির শিকার। এর স্পষ্ট প্রভাব পড়ছে আপনার চোখে মুখেও। খারাপ হচ্ছে ত্বক। রোজ সন্ধেয় এককাপ চাই এই ক্লান্তি নিমেষে কমিয়ে দিতে পারে। এর জন্য রোজ চুমুক দিতে হবে রোজমেরি চায়ে।
বাঙালির আবার দিনের নানা সময়ে নানা স্বাদের চা না হলে বুদ্ধিটা ঠিক খোলে না। চা হতে হবে নিখুঁত। আর তা না হলেই মেজাজ যাবে বিগড়ে। ‘বাজে’ চায়ে চুমুক দিতে হতে পারে, এই চিন্তাটাই আপনার দিন খারাপ করার পক্ষে যথেষ্ট। চা মনমতো হলো না, এই আতঙ্কের আবার একটা পোশাকি নাম আছে- ‘টেপিডোফোবিয়া’!