বিজয়ার পরেই শুরু হয়ে যায় লক্ষ্মীপুজোর তোড়জোড়। এই দিন বাঙালির বাড়িতে বাড়িতে পূজিত হন ধন সম্পদের দেবী লক্ষ্মী। এই পুজো সাধারণত ঘরোয়া ভাবেই করা হয়। সন্ধেবেলায় ধূপ, ধুনো জ্বালিয়ে মন্ত্রোচ্চারণে, লক্ষ্মী পাঁচালিতে দেবীর আরাধনা হয় ঘরে ঘরে ‘কোজাগরী’ কথাটির অর্থ ‘কে জেগে আছ’? হিন্দু পুরাণ মতে আশ্বিনের এই পূর্ণিমার রাতে লক্ষ্মী এসে ঘরে ঘরে খোঁজ নিয়ে যান, কে জেগে আছে।
শুধু কোজাগরী পূর্ণিমাতেই নয়, ঘরে ঘরে মেয়ে বউরা মঙ্গলবার বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীর আরাধনা করে থাকেন। সাধারণ মধ্যবিত্ত বাড়িতে বহু যুগ ধরেই লক্ষ্মীপুজো সম্পূর্ণ স্ত্রী আচারের পুজো হিসেবেই পরিচিত। পুরুষ পুরোহিত শুধু নয়, লক্ষ্মী দেবী সন্তুষ্ট হন স্ত্রীদের সামান্য জোগাড় ও ভক্তিতেই।
স্ত্রীআচারে কীভাবে করবেন লক্ষ্মী পুজো?
প্রথমেই দেহশুদ্ধি করতে হবে। মাথায় গঙ্গাজল ছিটিয়ে নারায়ণকে স্মরণ করতে হবে।
এরপর সূর্যকে জল দিয়ে মন্ত্র পড়ে প্রণাম করতে হবে।
ফুল, নৈবদ্য, আসন, ঘট, ভোগ, ৫ রকমের ফল দিয়ে গঙ্গাজল ছিটিয়ে নিতে হবে।
রাখতে হবে একটি তামার পাত্র।
মঙ্গলঘটে স্বস্তিক চিহ্ন আঁকতে হবে রাখতে হবে আম্রপল্লব।
পদ্ম দিতে পারেন লক্ষ্মীর চরণে, ধানের শীষ, লক্ষ্মীর পা দিয়ে আল্পনা আঁকতে হবে পুজোর জায়গায়।
এরপর পাঁচালি পড়ে, উলু শঙ্খধ্বনি সহযোগে গান গেয়ে ধ্যান মন্ত্র জপ করবেন। সব অর্পণ করে ৩ বার অঞ্জলি দিয়ে, ভোগ নিবেদন করে পুজো শেষ করতে হবে।
চলতি বছর, ১৬ অক্টোবর পড়েছে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো । তবে, ১৭ অক্টোবরও পুজো করতে পারবেন । আসলে, বুধবার পূর্ণিমা লাগছে সন্ধে ৭টা ২৩ মিনিট নাগাদ । পূর্ণিমা তিথি থাকবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ১৭ মিনিট পর্যন্ত । তাই, বুধবার সন্ধে সাড়ে সাতটার পরও পুজো করতে পারেন । আবার অনেকে বৃহস্পতিবার অর্থাৎ লক্ষ্মীবারে বিকেল ৫টার মধ্যে মায়ের আরাধনা করতে পারেন ।
দেবীকে ভোগ দেওয়ার নিয়মও একেক জায়গায় একএকরকম । পূর্ববঙ্গীয় বাঙালি পরিবারগুলিতে মা লক্ষ্মীকে আমিষ ভোগ দেওয়ার রীতি রয়েছে। বাঙাল বাড়িতে জোড়া ইলিশ দেওয়ার রীতি আছে । কিন্তু, তা বলে সব বাঙাল বাড়িতেই ক্ষেত্রে এনিয়ম প্রযোজ্য নয় । কোথাও আবার মাছের পাঁচ রকম পদও রান্না করা হয় । পশ্চিমবঙ্গীয় বহু পরিবারে খিচুড়ি, তরকারি, বা লুচি-সুজি ভোগ দেওয়ার নিয়ম আছে ।