‘সাজো সাজাও এমনভাবে, দেখতে নাড়ি কেমন তুমি’
আর এই সাজের ক্ষেত্রে দেশ বিদেশের তাবড় তারারাও চোখ বুজে ভরসা করেন কলকাতার এক ছেলের উপরে। যদিও আলাদা করে তাঁর পরিচয় দেওয়া ধৃষ্টতা, তবু ‘নাম তো শুনা হি হোগা’ তিনি সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় (Sabyasachi Mukherjee) । নিজেদের ডি ডে-তে দীপিকা পাড়ুকোন, ক্যাটরিনা কাইফ, আলিয়া ভাট, প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার মতো বলিউডের প্রথম সারির তারকারা সেজেছেন সব্যসাচীর নকশা করা গয়না এবং পোশাকে। শুধু বলিউডই বা কেন জেনিফার লোপেজ়, রিহানার মতো তারকাদেরও নেকনজরে থাকে সব্যসাচীর অনবদ্য কাজ করা নানা গয়না, ব্যাগ। সেই ঝাঁচকচকে সাজের আলো এবার এসে পড়ল লখনউয়ের এক ছোট্ট বস্তিতে।
সব্যসাচীর লোগোর বাঘ সাঁটানো পোশাক পরা কার্যত সবার কাছেই স্বপ্নের মতো। কিন্তু, এহেন প্রথম সারির ফ্যাশন ডিজাইনারের নকশা করা পোশাকের দাম যে গগনচুম্বী হবে তা বলাই বাহুল্য। দেশের সংস্কৃতি তাঁর প্রতিটা পোশাকে সুতোর ফোঁড়ে ফুটে ওঠে। নতুন প্রজন্ম তাঁর কাজে বুঁদ। তাঁর ব্র্যান্ডের একটা পোশাক গায়ে তুলতে পারা সাধারণ মধ্যবিত্তের কাছে রূপকথার থেকে কম কিছু নয়।
কিন্তু যাঁদের সাধ্য নেই? তারা বুঝি সাজবে না? আলবাত সাজবে। কীভাবে সাজবে? তা দেখিয়ে দিয়েছে লখনউয়ের এক বস্তির একঝাঁক প্রান্তিক শিশুরা। সৌজন্যে ‘ইনোভেশন ফর চেঞ্জ’ এনজিও। ‘ইনোভেশন ফর চেঞ্জ’ এর হাত ধরে একদল সুবিধাবঞ্চিত খুদে চমকে দিয়েছে নেটিজেনদের।
'হেরিটেজ ব্রাইডাল 2023' কালেকশনের অনুকরণে নিজেরাই পোশাক বানিয়েছে ওই এনজিওর ছেলেমেয়েরাই। দান করা পোশাক, ফেলে দেওয়া পুরনো কাপড়ের টুকরো দিয়েই সব্যসাচীর কালেকশনের অনুকরণে এই সমস্ত পোশাক বানানো হয়েছে। সেসমস্ত পোশাক গায়ে পরে সব্যসাচীর ভিডিও রিক্রেয়েট করেছে ওরা। আর এই সম্পূর্ণ ভিডিওটি করেছে ১৫ বছর বয়সি একটি ছেলে, যে বড় হয়ে বানাতে চায় সিনেমা।
অপেশাদার এই একদল ছেলে মেয়ে সব্যসাচীর মডেলদের জুতোয় পা গলিয়ে যেন অনন্য। হাঁটা চলা, লুক থেকে, সাজ, সিনেমাটোগ্রাফি বস্তির ওই পরিসরেই গুটিকয়েক জিনিসে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই ভিডিয়ো নিমেষে ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেশ বিদেশে এই ভিডিয়োর প্রশংসা হয়। বস্তির ছেলেমেয়েদের এই কাজে মুগ্ধ হন খোদ সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়।
ভিডিয়ো পোস্ট করে এনজিও-র তরফে ইনস্টাগ্রামে লেখা হয়েছে, ‘আমরা লখনৌ ভিত্তিক একটি এনজিও। ৪০০-রও বেশি শিশুদের নিয়ে কাজ করছি এবং এই শিশুদের বিনামূল্যে পড়াশোনা শেখাচ্ছি। এই পোশাকগুলি আমাদের শিক্ষার্থীরা ডিজ়াইন করেছে। ওরা সবাই বস্তিতে থাকে। অতি দরিদ্র ও অসহায় পরিবার থেকে আসে। নিজস্ব সৃজনশীলতার মাধ্যমে ডিজ়াইনার পোশাক তৈরি করার চেষ্টা করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং আশপাশের লোকজনদের থেকে পাওয়া পোশাক বাছাই করেই তারা এই কাজ করেছে।’
ভাঙাচোরা দেওয়াল, খসে পড়া পলেস্তারা, কুঁড়ে ঘর- বস্তির এমন এবড়ো খেবড়ো ছবিকেই সব্যসাচীর সেটে সাজিয়ে তুলেছেন ওই খুদেরা। এই ভিডিয়োতে মন্তব্য করে ভালবাসা জানিয়েছেন খোদ সব্যসাচী। তিনি এই ভিডিয়ো শেয়ার করতে আরও মানুষের কাছে পৌঁছে যায় এই অনন্য উদ্যোগ।
আসলে সৃজনশীলতা আর প্রতিভা একসঙ্গে গিঁট বাঁধলে কোনও কিছুই যে অসম্ভব না, তা বুঝিয়ে দিল এই খুদেরা। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ফ্যাশন ডিজ়াইনার সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় মনে করেন, সমস্ত ভারতীয় মহিলাদেরই লাল রঙের পোশাকে অসাধারণ দেখতে লাগে। গায়ের রং, চেহারার বাছ বিচার করেন না তিনি। ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে এমন পোশাক বানিয়ে তাঁর ভাবনাতে যেন আরও রঙ জুড়ে দিয়েছে এই প্রান্তিক খুদেরা।