একাকিত্ব গিলছে গোটা দুনিয়াকেই। বয়স্কদের আরেকটু বেশি হয়তো। কেউ নিঃসন্তান, কারোর সন্তান কর্মসূত্রে বিদেশে, কারোর সন্তান কাছেই থাকেন, কিন্তু হাতে সময় নেই, কিম্বা একই বাড়িতেই থাকেন, তাও দেখা হয় না। নিঃসঙ্গতা আঁকড়ে ধরছে মা-বাবাকে। টাকা দিয়ে সঙ্গীর 'পরিষেবা' কিনছেন অনেকেই, এই কলকাতা শহরেই।
বিভিন্ন সংগঠন তৈরি হয়েছে, তাদের কাজই বয়স্ক মানুষের জন্য নানা ধরনের পরিষেবা দেওয়া। কী করছেন সংগঠনের কর্মীরা? জুতো সেলাই থেকে চণ্ডী পাঠ! কেউ প্রবীণ দম্পতির ব্যাঙ্ক-বিমার কাজ করে দিচ্ছেন, বাজার-হাট-ওষুধ কেনা থেকে শুরু করে বিকেলে চায়ের টেবিলে একটু আড্ডা পর্যন্ত। দরকারে ডাক্তার-বদ্যি ডেকে নানা, বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কাজও করে দিচ্ছেন সংস্থার কর্মীরা।
প্রয়োজন হলে সেই সঙ্গী যেন তাঁদের বাড়িতেই থেকে যেতে পারেন, তার জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থাও থাকছে। ‘সাথে আছি’, ‘অটাম লিভস’, ‘মাইতিস’-এর মতো বেশ কিছু সংস্থা সারা ভারতে একাধিক শাখা খুলেছে প্রবীণদের নানা পরিষেবা দিতে।
তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে বছর ৪৫ এর মহিলা-পুরুষরাও কাজ করেন এই সব সংগঠনের কর্মী হিসেবে। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রত্যেকেরই আধার কার্ড ও অন্যান্য পরিচয়পত্রের কপি জমা নেওয়া বাধ্যতামূলক। বেতন মাসিক ১০ থেকে ১৩ হাজার টাকা।
Global State of Connections Report বলছে, ২০২৩ সালে সারা বিশ্বের প্রায় ১২৫ কোটি মানুষ স্বীকার করেছেন তাঁদের একলা লাগে, অনেকেরই একাকিত্বের মাত্রা অনেকটা বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব বলে, পৃথিবীর জনসংখ্যার একটা বড় অংশ একাকিত্বের শিকার। বয়ঃসন্ধিতে প্রায় ১০ %, এবং বয়স্কদের মধ্যে প্রায় ২৫ % ছড়িয়েছে এই সামাজিক সমস্যা।
নিউইয়র্কের কথা বলি? সেখানে তো গত বছর নিয়োগ করা হল একাকিত্বের রাষ্ট্রদূত। পোশাকি নাম লোনলিনেস অ্যাম্বাসাডর। সে দেশেও মহামারির মতো ছড়িয়েছে একাকিত্ব। অতিমারী পরবর্তী সময়ে আরও বাড়ছে সমস্যা।
ছবিটা কমবেশি ভারতেও একই। ফারাক একটাই। একাকিত্ব, অবসাদ নিয়ে কথা বলাটা এ দেশে এখনও ট্যাবু। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে এখনও হাজারো ফিসফাস। Longitudinal Ageing Study in India বা (LASI) ২০১৭-১৮ সালে ভারতে একটি সমীক্ষা করেছিল। সেই সমীক্ষার হিসেব বলছে ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বের জনসংখ্যার প্রায় ২০.৫ %-মাঝারি একাকিত্বে ভুগছেন এবং ১৩.৩ %-এর একাকিত্বের মাত্রা মারাত্মক।