'যে ভাষার জন্যে, এমন হন্যে এমন আকুল হলাম
...... সে ভাষাতে আমার অধিকার"।
আর সে অধিকার যদি কেড়ে নেওয়া হয়?
২১ ফেব্রুয়ারি আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস। বিশ্বায়নের পৃথিবীতে ঠিক কতখানি সুরক্ষিত সবার মাতৃভাষা? গোলকায়নের ভুবনডাঙায় কি হারিয়ে যেতে বসেছে পৃথিবীর ভাষা বৈচিত্র? একটি সাম্প্রতিকতম গবেষণা কিন্তু তেমনই আশঙ্কার কথা শোনাল। গবেষণাটি বলছে, চলতি শতাব্দীর শেষে পৃথিবী থেকে মুছে যাবে দেড় হাজারটি ভাষা। যে ভাষায় মানুষ হাসল, কাঁদল, মনের আবেগ, অনুভূতি প্রকাশ করল, ভালবাসল, প্রতিবাদ করল, সেই ভাষা সেই অধিকার হারিয়ে যাবে!
'নেচার, ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন' নামে একটি জার্নালে ওই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকদের মতে, বর্তমানে পৃথিবীতে ৬৫০০ থেকে ৭০০০টি ভাষাভাষী মানুষ রয়েছেন৷ অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জানাচ্ছেন, অন্তত ৫০ শতাংশ ভাষাই চরম বিপদসীমায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।
আগামী চার দশকে ভাষার মৃত্যু বাড়তে পারে তিন গুণ! এর অর্থ হল প্রতি মাসে পৃথিবী থেকে মুছে যেতে পারে একটি করে ভাষা৷ গবেষক ফেলিসিটি মেইকিন্স সংবাদমাধ্যমকে এ-কথা জানিয়েছেন।
গবেষকদের মতে, পৃথিবীর ভাষা বৈচিত্রকে যথাসম্ভব বাঁচিয়ে রাখতে 'কমিউনিটি লেভেল ডকুমেন্টেশন' প্রয়োজন। সেই সঙ্গে প্রয়োজন দ্বিভাষিক শিক্ষা চালু করা।
কেন মুছে যাচ্ছে ভাষা? কারণ হরেক রকমের। অভিবাসনের সমস্যা, অর্থনৈতিক কারণ, রাজনৈতিক কারণ- সবকিছুই হত্যা করছে কারও না কারও মাতৃভাষাকে। গবেষকরা দেখিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ার আদিম অধিবাসীদের ভাষাকে পরিকল্পিত ভাবে ধ্বংস করেছে ঔপনিবেশিক শক্তি। মাতৃভাষায় কথা বলার জন্য শাস্তি দিয়েছে তারা। নির্মম দমনপীড়নের ফলে শিশুরা মাতৃভাষায় কথা বলার সুযোগটুকুও পায়নি।
মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার হারাচ্ছে মানুষ। আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসে এটাই বোধহয় সবচেয়ে মর্মান্তিক তথ্য।