বিজয়া দশমীর রাতে মণ্ডপে মণ্ডপে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন বিবাহিত নারীরা৷ অনুপম সেই দৃশ্য কিন্তু তাতে অনুপস্থিত থাকেন বিধবা মহিলারা। এ তো আজকের কথা নয়। বহু বছর ধরেই সামাজিক অনুশাসনের বেড়ি তাঁদের পায়ে। কেবল বিধবারাই বা কেন! যাঁরা রূপান্তরকামী, তাঁরাও তো 'ব্রাত্যজন' সিঁদুরখেলার এই আনন্দযজ্ঞে। কিন্তু এবার বোধহয় ধীরে ধীরে সাবালক হচ্ছে শহর। নিউটাউনের এক পুজো মণ্ডপে সধবা মহিলাদের সঙ্গেই সিঁদুর খেলায় মেতে উঠলেন স্বামীহারারাও। তাঁদের সঙ্গেই থাকলেন রূপান্তরকামীরাও৷ নেপথ্যে এক মহিলা, যিনি ২০১৮ সালে বিয়ের মাত্র এক মাসের মাথায় একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় স্বামীকে হারান।
Bijoya Dashami: তিন বছরের প্রতীক্ষা পেরিয়ে উদযাপন, তাই দশমীর বিষাদ এ'বছর যেন আরও গাঢ়
তাঁর নাম অন্বেষা চক্রবর্তী। নিউটাউনের অভিজাত আবাসনের এই পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা তিনি৷ অন্বেষার স্বপ্ন ছিল শাঁখা সিঁদুর পরে আর পাঁচ জন মেয়ের মতোই বিজয়া দশমীতে মেতে উঠবেন সিঁদুর খেলায়। কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। দুর্ঘটনায় হারাতে হয়েছে স্বামীকে। সেই শোক পেরিয়ে অন্বেষা চেয়েছেন নিজের মতো করে বাঁচতে। নিজেকে রীতিনীতির শিকলে আটকে রাখতে তিনি নারাজ৷ তাই নিজের বৈধব্যকালেই সিঁদুর খেলতে শুরু করেন তিনি। প্রথম প্রথম তা নিয়ে বিতর্কের ঝড় বয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দমে যাননি একরোখা এই কন্যের৷ বরং নিজের জেদ আর স্বপ্ন ছড়িয়ে দিয়েছেন আরও অনেক 'ব্রাত্য' নারীর চোখে।
নিউটাউনের ওই আবাসনের পুজোয় সিঁদুর খেলায় শামিল হন বিধবা মহিলা থেকে শুরু জরে সমকামী থেকে রূপান্তরকামী- সকলেই। সম্প্রতি অন্বেষা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন বিধবা থেকে যৌনকর্মী- সব 'ব্রাত্য' নারীদের কাছে সিঁদুরখেলার আনন্দ পৌঁছে দেওয়া।
আবাসনের বিজয়া দশমীর সিঁদুরখেলায় অংশগ্রহণ নিয়েছিলেন রূপান্তরকামী অনুকূল ধাড়া, যিনি পুরোনো পরিচয় ডিঙিয়ে রাজকুমারী কোকো নামেই এখন পরিচিত। এসেছিলেন পেশায় ‘হেয়ার স্টাইলিস্ট’ পুষ্পক সেনও। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন উত্তর কলকাতার বিজয়িতা মৈত্র। বিজয়িতাও ২০২১ সালে করনেয় তাঁর স্বামীকে হারিয়েছেন। কিন্তু সাদা পোশাক আর অনুশাসনের বেড়াজালে নিজেকে আটকে রাখায় বিশ্বাস করেন না তিনি। মনে করেন, ওভাবে সম্মান জানানো যায় না চলে যাওয়া প্রিয় মানুষটিকে। এমনই সব বেড়া ভাঙার গল্পে ঝলমল নিউটাউনের ওই পুজো।