সরস্বতী পুজোকে কেন্দ্র করে প্রায় ১০০ বছর আগে এই কলকাতা শহরে ঘটে গিয়েছিল এমনই এক ঘটনা, যা বাঙালির দুই চিরকালীন আইকনকে জড়িয়ে দিয়েছিল এক বিতর্কে! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সুভাষচন্দ্র বসু।
সময়টা ১৯২৮ সাল। এলো বাগদেবীর আরাধনা-লগ্ন। কলকাতার অনেক ছাত্রাবাসের মতোই সিটি কলেজের রামমোহন হস্টেলের হিন্দু ছাত্ররা ঠিক করলেন, তাঁরাও সরস্বতী পুজো করবেন। শুরু হল প্রস্তুতি। আর তা নিয়েই ছাত্রদের সঙ্গে ঝামেলা লেগে গেল কলেজ কর্তৃপক্ষের।
সিটি কলেজের প্রতিষ্ঠা আনন্দমোহন বসু নিজে ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের প্রতিনিধি। তাই এই কলেজের নিয়ন্ত্রণ ছিল ব্রাহ্মসমাজের হাতে। সব ধর্মের ছাত্রদের পঠনপাঠনই চলত এখানে। তবে কলেজ ও ছাত্রাবাসের জীবনধারায় ক্ষীণ হলেও ব্রাহ্ম প্রভাব কিছুটা ছিলই। সেই সূত্রেই রামমোহন হস্টেলে সরস্বতী পুজো তথা মূর্তিপূজা নিয়ে কড়া আপত্তি জানালেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। অধ্যক্ষ হেরম্বচন্দ্র মৈত্র সরাসরি ছাত্রদের পুজো করার বিষয়ে সংযত হতে বললেন।
কিন্তু তাতে লাভ হল না। কারণ হিন্দু ছাত্রদের দাবির সপক্ষে এসে দাঁড়ালেন স্বয়ং সুভাষচন্দ্র বসু। চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যুর পর তিনিই বাংলার তরুণ-তুর্কী নেতা। সুভাষ জানিয়ে দিলেন, সরস্বতী পুজো হবে। আর তাঁর বিরোধিতা করলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর! কলেজ হোস্টেলে ব্রাহ্ম আদর্শের বাতাবরণ বজায় থাকবে- এই নীতিকে ছত্রেছত্রে সমর্থন করে হোস্টেলে সরস্বতী পুজো করার দাবিকে রীতিমতো তুলোধনা করেন রবীন্দ্রনাথ।
এই বিতর্ক ও কলেজ কর্তৃপক্ষের অনড় মনোভাবের ওই হস্টেলে সরস্বতী পুজো হয়নি আর। তবে, কলেজের বাইরে পুজো হয়েছিল সুভাষচন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতায়।