সবে পেরিয়ে এলাম ৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস। মাঝে ২/৩ টে দিন, তারপর রাখি পূর্ণিমা। দুটো দিন যেমন পরপর আসে, ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির আড়ালে থাকা দীর্ঘ সংগ্রামের সঙ্গে রাখি বন্ধনের এক গভীর যোগ রয়েছে। ফিরে দেখা যাক সেই-ই ইতিহাস।
১৯০৫-এর ১৯ জুলাই বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব পেশ করলেন ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন। তৎকালীন বাংলা মানে কিন্তু শুধু বাংলা নয়, বাংলা, বিহার, আসাম, শ্রীহট্ট সবটা মিলে। অবিভক্ত বাংলাকে শোষণ করা সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল ক্রমশ। তাই প্রশাসনিক কারণে ইংরেজ শাসকরা ঠিক করলেন, ধর্মের ওপর ভিত্তি করে ভাগ করা হবে বাংলাকে।
ইংরেজদের উদ্দেশ্য ছিল, ক্রমশ ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের আঁতুড়ঘর হয়ে ওঠা বাংলা ভাগ করে বিদ্রোহের গতি কমিয়ে আনা। সে কারণেই বঙ্গ ভঙ্গের প্রস্তাব আনা। দিনটা ছিল ১৬ আগস্ট, বাংলায় শ্রাবণ মাস, রাখি পূর্ণিমা। হিন্দু বাড়িতে মেয়েরা তাদের ভাই-এর মঙ্গল কামনায় হাতে পরাবে রাখি। এই দিনেই অন্যরকম রাখি বন্ধনের কথা মাথায় এল রবীন্দ্রনাথের।
ভাই-বোনের নয়, রাখিবন্ধন হয়ে উঠল হিন্দু-মুসলিমের সম্প্রীতি উৎসব। এ ধর্মের মানুষ ভালোবেসে জড়িয়ে ধরে অন্য ধর্মের ভাই বোনেদের হাতে পরিয়ে দিচ্ছে রাখি। হাতে হাত রেখে ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দিকে ছুঁড়ে দেওয়া হল প্রতীকি প্রতিবাদ। রবি ঠাকুরের ডাকে ধর্ম নির্বিশেষে সারা বাংলা এক হয়েছিল সে দিন। সেই-ই শুরু। তারপর চলতে থাকল প্রতিবাদ। লাগাতার প্রতিবাদের মুখে দীর্ঘ ৬ বছর পর ১৯১১ সালে ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ রদ করলেন বঙ্গ ভঙ্গের প্রস্তাব।
দিন ক্ষণ তিথি মেনেই প্রতি বছর আসে রাখি পূর্ণিমা।তবে রবি ঠাকুরের রাখি বন্ধনের এই ইতিহাসে যে আবেগ জড়িয়ে আছে, তার জোর বাঙালির কাছে একটু বেশিই। তাই আমাদের কাছে রাখি মানে শুধু ভাই-বোনের দিন নয়। অনেক অমিল পেরিয়ে, বৈষম্য, পেরিয়ে অনেক হিংসা, স্বার্থ জয় করে মানুষকে ভালবেসে কাছে টেনে নেওয়ার দিন।