বিয়ে মানে দু'টি মনের মিলন । বিয়ে মানে ভালবাসার বন্ধন । বিয়ে মানে সারা জীবন একে অপরের সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি, সুখ-দুঃখের স্মৃতিচ্ছবি । জীবনের শেষ মুহূর্তগুলিকে মনের মানুষের সঙ্গে বাঁচার স্বপ্ন দেখা । সমাজের চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী, বিয়ে কেবলমাত্র দু'টো মানুষের মধ্যেই হয় । সত্যিই কি তাই ? বর্তমান সমাজে কিন্তু বিয়ের সংজ্ঞা বদলাচ্ছে । নিজেকে ভালবেসে, নিজের সঙ্গে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন অনেকে । যার পারিভাষিক নাম সোলোগামি । অর্থাৎ নিজেকেই নিজে বিয়ে করা । বিয়ের সব আচার অনুষ্ঠান হবে। হিন্দু মতে হলে পাত্র বা পাত্রী একা সাত পাক ঘোরা, খ্রিস্টান হলে চার্চে গিয়ে সব আচার পালন করা । সবই হবে । তবে, এই বিয়েতে থাকবে শুধু একটিমাত্র মানুষ । বিশ্বে এখন সোলাগামি রীতিমতো ট্রেন্ডিং । সোলাগামি ছেলে-মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই দেখা যায় । তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, মেয়েরা এখন সোলোগামিতেই বিশ্বাসী । বিয়ের স্টেরিওটাইপ ভেঙেছেন বহু মেয়ে । ভারতেও এমন উদাহরণ রয়েছে । সম্প্রতি, সোলোগামি-র তালিকায় নাম লেখালেন আমেরিকার জনপ্রিয় পপ তারকা ব্রিটনি স্পিয়ার্স । ভাঙলেন বিয়ের চিরাচরিত প্রথা । নিজেকেই নিজে বিয়ে করলেন পপ তারকা । বিবাহ বিচ্ছেদের পাঁচ মাসের মধ্যে জীবনের বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন । সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও পোস্ট করে সুখবর দিয়েছেন ব্রিটনি ।
ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেন ব্রিটনি । ভিডিওতে দেখা যায়, পরনে তাঁর হালকা হলুদ রঙের গাউন। মাথায় নকশা করা সাদা ওড়না। এককথায় যাকে বলে কনের সাজ । ব্রিটনি জানিয়েছেন, তাঁর জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত এই বিয়ে । ক্যাপশনে ব্রিটনি লেখেন, "যে দিন আমি নিজেকে বিয়ে করেছিলাম। আবার সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনলাম। বোকা বোকা এবং অদ্ভুত মনে হলেও আমার মনে হয় এটি আমার জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত।" বিয়ে তিনি অনেকদিন আগেই করেছিলেন, সম্প্রতি ছবি প্রকাশ্যে এনেছেন । ভিডিও ছাড়াও একাধিক ছবিও শেয়ার করেছেন ব্রিটনি । যেখানে দেখা গিয়েছে একটি ফাঁকা গির্জার অন্দরমহল । কখনও তাঁকে সুইমিং পুলের ধারে বসে থাকতে দেখা যায়। আবার কখনও বিলাসবহুল হোটেলের ঘরের ভিতর।
এর আগে ব্রিটনি একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছেন । জনপ্রিয় পপ তারকার তিনটে বিয়ে । ২০০৪ সালে জেসন অ্যালেন আলেকজান্ডারকে বিয়ে করেছিলেন ব্রিটনি। কিন্তু সেই বছরই তাঁদের সংসার ভেঙে যায় । ওই বছরই ব্রিটনি-র জীবনে আসেন কেভিন ফেডারলাইন । ২০০৪ সালেই বিয়ে করেন তাঁরা । কিন্তু, ২০০৭ সালে বিচ্ছেদ হয় তাঁদের । তারপর ২০২২ সালের স্যাম আসঘারির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন গায়িকা । কিন্তু, ২০২৩-এই বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন জানান । ২০২৪ সালে তাঁদের আইনি বিচ্ছেদ হয় । তিনবার বিয়ের পর এবার নিজেকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলেন, তাই মজা করেই সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, আবারও করে ফেললাম ।
ভারতেও সোলোগামি-র উদাহরণ রয়েছে । ভারতে প্রথম বিয়ের স্টেরেওটাইপ ভেঙেছেন গুজরাতের ক্ষমা বিন্দু । বিয়ের সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান হয়েছিল । মেহেন্দি, গায়ে হলুদ সবই হয়েছিল । ক্ষমাও সেজেছিলেন একেবারে বিয়ের কনের মতো । লাল লেহেঙ্গায় নজর কেড়েছিলেন । নিজের হাতেই সিঁথি ভরিয়ে দিয়েছিলেন সিঁদুরে । ২০২২ সালে বিয়ে করেছিলেন । ২০২৩-এ প্রথম বিবাহ বার্ষিকীরও উদযাপন করেন একেবারে অন্যভাবে । এক বছরে নিজের সঙ্গে কীভাবে কাটিয়েছেন, তার ভিডিও পোস্ট করেন । নিজেকে বিবাহবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানাতেও ভোলেননি ।
বিশ্বে এমন সোলোগামি বিয়ের সংখ্যা অনেক রয়েছে । সেই তালিকায় রয়েছেন, ফ্লোরিডার তরুণী ড্যানি অ্যাডামস, নেদারল্যান্ডসের জেনিফার, ইতালির লৌরা মেসি-সহ আরও অনেকে ।
কেন সোলোগামির সংখ্যা বাড়ছে ? মেয়েদের মধ্যেই এই প্রবণতা কেন ?
সোলোগামি স্ব-প্রেম ও স্বাধীনতা প্রকাশের একটা পন্থা বা উপায় । সোলোগামি কেন ট্রেন্ড করছে, সেই বিষয়ে চারটি কারণ উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা ।
নিজের সঙ্গে সম্পর্ক নিশ্চিত করা
সিঙ্গল বা অবিবাহিত থাকা মানে অসম্পূর্ণ বা একাকীত্ব নয়
নিজের দোষ, গুণ, দুর্বলতা...সবটা মেনে নেওয়া, আর তাই নিয়ে ভাল থাকা
ব্যক্তিজীবনের বৃদ্ধির অনুভবকে চিহ্নিত করা
মেয়েদের মধ্যে এই প্রবণতা বাড়ছে, কারণ তাঁরা একাকীত্বের ধারণটা বদলাতে চাইছেন । একটা অসফল বিয়ের জন্য দায়ী করা হয় একটা মেয়েকেই । বিয়ে না হলে মেয়েদের জীবন বৃথা । এমনও শোনা যায় প্রতিনিয়ত । এই ধারণা বদলাতেই মেয়েরা সোলোগামি-র পথ বেছে নিচ্ছেন । মেয়েরা যে নিজেরা একা বাঁচতে পারে, নিজের জীবনকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে পারেন, তার জন্য কারও উপর নির্ভর করাটা যে বাধ্যতামূলক নয়, সেটা বোঝাতেই মেয়েরা সোলোগামি-র দিকে ঝুঁকছেন ।
তবে, এরকমও অনেক উদাহরণ আছে, নিজেকে নিজে বিয়ের ২৪ ঘম্টার মধ্যেই ডিভোর্সও দিয়েছেন । সোফি মৌরে নামে এক তরুণী ঘটা করে নিজেকে নিজে বিয়ে করেছিলেন । কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজেকে ডিভোর্স দেন ।