কিচ্ছু না করা প্রতিযোগিতা৷ একদম কিচ্ছুটি না করে বসে থাকতে হবে ৯০ মিনিট৷ কথা বলা যাবে না৷ ফোন দেখা যাবে না। ঘুমিয়েও পড়া যাবে না৷ চুপচাপ শান্তভাবে বসে থাকতে হবে৷ চারপাশে ভিড় করে থাকবেন দর্শকরা। চুপচাপ বসে থাকা প্রতিযোগিদের মধ্যে থেকে ভোট দিয়ে তাঁরা বেছে নেবেন ১০ জনকে। সেই ১০ জনের হৃৎস্পন্দনের গতি মাপা হবে। যাঁর হার্ট রেট সবচেয়ে 'স্টেবল', তিনি ট্রফি জিতবেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার এই প্রতিযোগিতার নাম 'স্পেস আউট' কম্পিটিশন৷ ভীষণ ব্যস্ততার জীবন দক্ষিণ কেরিয়ায়। সর্বক্ষণ প্রতিযোগিতা। নিরন্তর ইঁদুরদৌড়। জীবনযাপনের এমন ধরনের মাঝে একটু শান্তির পরশ আনতেই এমন প্রতিযোগিতার আয়োজন।
১০ বছর আগে হুপস্যাং (Woopsyang) নামে এক ভিজুয়াল আর্টিস্ট এই প্রতিযোগিতার সূচনা করেন। মারাত্মক স্ট্রেস এবং বার্ন আউটের অ্যান্টিডোট হিসাবেই এই চুপচাপ বসে থাকার খেলা। এখন প্রতিযোগিতার দায়িত্বে সিওল নগরীর কর্তৃপক্ষ। হাজার চারেক আবেদন জমা পড়ে অংশগ্রহণের জন্য৷ বেছে নেওয়া হয় শখানেককে।
সিওলে শুরু হলেও এখন বিশ্বের নানা শহরে ছড়িয়ে পড়েছে এমন আশ্চর্য প্রতিযোগিতা। বেজিং, রটরডাম, তাইপেই, হংকং, টোকিওর মতো শহরে অনুষ্ঠিত হয় এমন উদ্যোগ। ২০২৪ সালের সিওলের প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছেন ফ্রিল্যান্স অ্যানাউন্সার কিওন সো এ (Kwon So-a)। অগাস্ত রদিনের 'দ্য থিংকার'-এর আদলে তৈরি ট্রফি জিতেছেন তিনি৷
জয়ের পর কিওন বলেছেন, কোরিয়া ভীষণ প্রতিযোগিতামূলক একটি দেশ। সকলেই ভাবেন তিনি যদি কিছু না করেন, তাহলে পিছিয়ে পড়বেন। কিন্তু সবার আগে নিজের শরীর ও মানসিক স্বাস্থ্য। তাই মাঝেমধ্যে জীবনের গতি কমিয়ে ফেলাটা বড্ড জরুরি।
প্রতিদিনের কর্মব্যস্ত জীবনে ক্লান্ত? ভীষণ স্ট্রেসড? কিচ্ছু ভালো লাগছে না? মাথা কাজ করছে না কাজের চাপে? আপনার মহৌষধ কী জানেন? নিকসেন। এটি একটি ডাচ কনসেপ্ট। যার মোদ্দা কথা হল কিচ্ছুটি না করে জমিয়ে আলসেমি করা।
প্রথম বিশ্বের বিশেষজ্ঞদের অনেকেই এখন বলছেন কাজের চাপে থেঁতলে যাওয়া মগজকে সারিয়ে তুলতে নিকসেনের বিকল্প নেই। নিকসেন কিন্তু মেডিটেশন নয়৷ এর কোনও নির্দিষ্ট পদ্ধতি নেই৷ কর্মব্যস্ত জীবন থেকে ছুটি নিয়ে কয়েকটিদিন কিচ্ছু না করেই কাটিয়ে দেওয়ার নাম নিকসেন। হয়তো বই পড়লেন।ব্যালকনিতে বসে গাছপালা, পাখি, পথচলতি মানুষ দেখলেন। অথবা গান শুনলেন। মোদ্দা কথা, কিছুই করলোন না তেমন। খানিকটা বিশ্রাম দিলেন মন আর মগজকে।
মনস্তত্ত্ববিদেরা বলছেন, এই 'কিছু না করার' ব্রেকটা বড্ড জরুরি আমাদের জন্য। এতে আমাদের সৃজনশীলতা বাড়ে, ক্লান্ত মস্তিষ্ক তরতাজা হয়। ফিরে আসার পর আমরা হয়ে উঠি আরও বেশি ঝকঝকে, তরতাজা।