আড্ডা, ভুরিভোজ-এর আগে যদি বাঙালিকে কিছু বেছে নিতে বলা হয়, নিঃসন্দেহে তা হবে ঘুম। শুধু বাঙালি নয় গোটা মনুষ্যজাতির সংস্কৃতিতেই একেবারে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে ঘুম। ঘুমের চাহিদা বিশ্বজোড়া, অথচ যোগান তলানিতে। দিন দিন তাই মহার্ঘ্য হচ্ছে ঘুম।
'ঘুম ভুলেছি, জেগে থাকি সারা বেলা...', এমন গান গুনগুন করতেই ভালো লাগে, কিন্তু আদতে এরকম হলে কিন্তু খুব সমস্যা। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত ঘুম না হলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে আমাদের। ঘুম ভোলা, বা বেশি ঘুমনো কোনওটাই ভাল নয়। সুন্দর সুস্থ জীবনের পেছনে যাদু মন্ত্রের মত কাজ করে পর্যাপ্ত ঘুম। রোজ রোজ একটু একটু করে ক্ষয়ে ক্ষয়ে আসে আমাদের মস্তিষ্ক। সেই ক্ষয়ে যাওয়ায় প্রলেপ লাগাতে চাই পর্যাপ্ত ঘুম।
পর্যাপ্ত ঘুম মানে কতক্ষণ?
পুর্ণবয়স্কদের জন্য দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা, কৈশোরে ৮-৯ ঘণ্টা, শৈশবে ১০ ঘণ্টা ঘুম দরকার ।
আপনার ঘুম গভীর হচ্ছে কিনা কীভাবে বুঝবেন?
ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন সাধারণত চারটি শর্ত উল্লেখ করেছে, যে কোনও একটি পূরণ হলেই বুঝবেন আপনার ঘুম গভীর হচ্ছে।
১) বিছানায় শোয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে ঘুম আসছে
২) রাতে একবারের বেশি ঘুম ভাঙছে না
৩) মাঝরাতে ঘুম ভাঙলে ২০ মিনিটের বেশি জেগে থাকতে হচ্ছে না
৪) বিছানায় যতক্ষণ শুয়ে থাকছেন, তার মধ্যে ৮৫ % সময় ঘুম হচ্ছে।
ভাল ঘুমের জন্য যা যা করা জরুরি
গায়ে পর্যাপ্ত রোদ লাগান
রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ভারী শরীরচর্চা করবেন না
ঘুমের ৬ ঘণ্টা আগে থেকেই ক্যাফেইন পান করবেন না
পুষ্টিকর খাওয়ার খান, ম্যাগনেসিয়াম-পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান
নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।
ঘুমের অন্তত ২ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খান
ঘুমের দেড় ঘণ্টা আগে মোবাইল-ল্যাপটপ বা স্ক্রিনের ব্যবহার বন্ধ রাখুন
অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চার অভাব, গ্যাজেট নির্ভর যাপন আধুনিক জীবনে এনে দিয়েছে ঘুম সংকট। ক্লান্তি আছে শরীরে, অথচ ঘুম নেই। পড়ুয়াদের দুই তৃতীয়াংশ এখন এই সমস্যায় ভুগছে, এমনটাই বলছে সাম্প্রতিক সমীক্ষা। আর তার ফলে তরুণ প্রজন্মের মনে বাসা বাঁধছে নানা অসুখ। অ্যানালস অফ হিউম্যান বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই সমীক্ষা।
১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সি ১১১৩ জন পড়ুয়াকে নিয়ে করা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মানসিক সমস্যার পেছনে অন্যান্য কারণের চারগুণ বেশি দেখা গিয়েছে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া। সমীক্ষায় আরও দেখা গিয়েছে, ঘুম না হওয়া বা কম ঘুম হওয়ার সমস্যা মেয়েদের বেশি।
ডায়েট করছেন প্রচুর জলপান করছেন, নিয়মিত শরীরচর্চা করছেন, কিন্তু মেদ ঝরতে বড্ড সময় লাগছে? সমস্যা তাহলে কোথায়? রাতের ঘুম ঠিক হচ্ছে?
ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন বলছে, ঘুমনোর সময় আমাদের শরীর থেকে গ্রোথ হরমোন নিঃসৃত হয়। সেই হরমোনের ফলেই ফ্যাট ব্রেকডাউন হয়, এবং এই প্রক্রিয়ার ফলেই মেদ ঝরে। কিন্তু দিনে চার-পাঁচ ঘণ্টা ঘুমোলে তা হতে পারে না। ফলে মেদ ঝরানোর বাকি সব শর্ত পূরণ হয়ার পরেও রোগা হওয়া যায় না।
শুধু নিজেদের শরীরের ক্ষতি নয়, ক্ষয়ে আসে আমাদের মনুষ্যত্বও। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মানুষের মধ্যে সাহায্য করার স্বভাব কমে আসছে।
সমীক্ষা কালে এক বড় সংখ্যক মানুষের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল অন্যের বাজারের থলি। দেখা গিয়েছে, যারা ঘুম বঞ্চিত, তাঁরা অন্যকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছেন কম।
ভাত ঘুম, রাত ঘুম, সময়ে এবং অসময়ের ঘুম কতই না তার রকম ফের। ছোট গল্পের ন্যায় ‘শেষ হয়েও হইল না শেষ’ ঘুম তো আছেই। সাসপেন্স থ্রিলারের মতো টানটান ঘুমও রয়েছে। সব ঘুমের আলাদা আমেজ । এই এত ঘুমের বহর নিয়ে নাকি জেগে বসে আছে গোটা বিশ্ব। এই সংকটের বুঝি একটাই দাওয়াই- পড়ে পড়ে ঘুমনো!।