"বিষাদ ছুঁয়েছে আজ, মন ভালো নেই,
মন ভালো নেই"
কবি লিখেছেন বটে, কিন্তু এই অনুভূতি তো আপনারই। ভীষণ চেনা? রোজ সবার মন ভাল থাকবে, একই রকম কর্মক্ষমতা থাকবে, হাসিখুসি মেজাজ থাকবে, এমনটা তো রোবটের হয়। মন থাকলেই এক আধ দিন মন ভাল থাকবে না, এমনটাই স্বাভাবিক। আর সে সব দিনে, চাইলেই ছুটি পাবেন কর্মীরা। সংস্থার লিভ পিলিসিতেই উল্লেখ রয়েছে এমনটা।
না, আমাদের দেশে নয়, তবে চিনের এক সংস্থায় এমনটাই দস্তুর। কর্মীর মন ভাল না থাকলে তাঁকে ছুটি মঞ্জুর করতে বাধ্য থাকে সংস্থা। সংস্থার নাম প্যাং ডং লাই। মূলত কর্মীর ওয়র্ক-লাইফ ব্যালেন্স করতেই এমন নিয়ম চালু করেছেন সংস্থার চেয়ারম্যান ইউ ডংলাই। বছরে এ ধরনের বাড়তি ১০ টি ছুটি নিতে পারবেন কর্মীরা। সকালে উঠে কোনও কর্মীর মনে হল, আজ মন ভাল নেই, ব্যাস, অফিসে একবার জানিয়ে দিলেই হবে। কোনওভাবেই ছুটি নামঞ্জুর হবে না।
এমনিতে বার্ষিক ৩০-৪০ দিন ছুটি থাকে ওই অফিসে, দৈনিক ৭ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। সংস্থার চেয়ারম্যান বিশ্বাস করেন, মন ভাল রেখে কাজ করলে তা কর্মী এবং সংস্থা দুইয়ের পক্ষেই সমান স্বাস্থ্যকর।
তবে মন ভাল না থাকার সমস্যা কিন্তু সারা পৃথিবীতেই ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে দীর্ঘ আড়াই বছরের অতিমারী পর্বে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। মনে রাখতে হবে, ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি, ফ্রাস্ট্রেশন, সবই কিন্তু আলাদা আলাদা সমস্যা। বেশ কিছু ক্ষেত্রে শুধু নিজে নিজে এগুলো থেকে বের হওয়া সম্ভবও নয়, তার জন্য মনোবিদ, মনস্তাত্ত্বিকরা রয়েছেন। যেই মুহূর্তে মনে হচ্ছে, মন খারাপের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে একটু হলেও বেশি, অবহেলা না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
শরীর খারাপ হলে সিক লিভ নেওয়া যায় যেমন, ঠিক তেমনই মন খারাপে আনহ্যাপি লিভ। এই যে আনহ্যাপি লিভ দেওয়ার চল শুরু হল, এ কী নেহাত বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা? নাহ, আসলে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে মন খারাপ। নানা বয়সের মন খারাপ। আধুনিক জীবনের নানা কারণই রয়েছে এই মন খারাপের পেছনে। দ্রুত গতির জীবন, ইঁদুর দৌড়, প্রত্যাশার পাহাড়প্রমাণ চাপ, অনিয়মিত, অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন, ঘুমহীনতা, অবসাদ, উদ্বেগ, সোশ্যাল মিডিয়ায় মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি, এই সবের কারণে আমাদের মনে ক্ষত তৈরি হয় রোজ।
সেই ক্ষতর সেরে ওঠা জরুরি। মনের স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা জরুরি, বিশ্বের বহু দেশ কিন্তু এই প্রয়োজনিয়তা অনুভব করেছে। চিনের এই সংস্থার সিদ্ধান্তও সেই প্রয়োজনীয়তা থেকেই। মেন্টাল হেলথ নিয়ে কথা বলার ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসছে সমাজ। এমনই কিছু কিছু ঘটনা রোজ কানের কাছে বলে দিচ্ছে শরীরের মতো মনেরও যত্ন নিন, মনকে ছুটি দেবেন না, বরং মনের জন্য ছুটি নিন।