শহুরে জীবন, একঘেয়ে কাজ, দিন শেষে ক্লান্তি, এই ভাবে দিন চলতে চলতে শনি রবির সঙ্গে বাড়তি একটা ছুটি পেলেই মনটা দে ছুট! তাই না? কিন্তু দু-তিন রাতের জন্য যাবেন কোথায়? বড় সড় কোথাও যাওয়ার সময় না থাকলে ঘুরে আসতে পারেন কার্শিয়াং থেকে।
খাতায় কলমে শরত এসে গেলেও পাহাড়ে এখনও ভরপুর বর্ষা। সারাদিন ভর মেঘের যাতায়াত কার্শিয়ং-এ। পাহাড়ে বর্ষার একটা আলাদা আমেজ আছে, অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে গেলে সেই আমেজ পাবেন ভরপুর। কার্শিয়ং স্টেশন-বাজারের কাছে গুচ্ছের হোটেল-হোমস্টে রয়েছে। অফসিজনে দিব্যি ঘর পেয়ে যাবেন কোনও একটিতে। আর একটু ফাঁকায় ফাঁকায় থাকতে চাইলে হিল কার্ট রোডের ওপরে ফটকদাড়ার বেশ কিছু হোটেলে থাকতে পারেন।
পাহাড়ে বর্ষায় আবহাওয়া কেমন থাকবে, তা নিশ্চিত বলা যায় না আগে থেকে। কপাল ভাল থাকলে ভোর বেলা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে জানলার দিকে চাইলে দেখতে পারেন কাঞ্চনজঙ্ঘা। আর কপাল মন্দ থাকলে? ধুর! পাহাড়ে আবার কপাল মন্দ হয় নাকি! মেঘলা আকাশ থাকলে ঘন ঘন বদলে যাবে ল্যান্ডস্কেপ। এই পাইনের বনের ফাঁক থেকে মেঘ এসে ঢেকে দেবে চরাচর। মিনিট খানেক পরেই আবার অন্যরুপ। পাহাড়ের বৃষ্টিও দারুণ রহস্যময়।
খাওয়া দাওয়া সেরে ঘরে বসে থাকবেন না, সঙ্গে ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়বেন যেদিকে দুচোখ যায়। পথে পড়বে মকাইবাড়ি চা বাগান, ক্যাসেলটন চা বাগান। বেলা গড়ালে বাড়ি ফিরবেন চা শ্রমিকেরা। স্কুল ফিরতি পাহাড়ি কচিকাঁচাদের দিকে হাত নাড়ালেই ওরা ফিরিয়ে দেবে সবুজ সারল্য ভরা হাসি।
ডাওহিলের দিকে যেতে চাইলেও বাধা নেই কোনও। সবুজের রাজত্বে ঘুরে বেড়াবেন নিজের মতো। পাহাড়ের নানা বাঁকে কুয়াশার আসা যাওয়া দেখতে পাওয়াও দারুণ অভিজ্ঞতা। হাঁটতে হাঁটতে হাঁপিয়ে গেলে জিরিয়ে নেবেন পথে। সন্ধেয় বাড়ির বাইরে নয়া থাকাই ভাল। বরং হোটল বা হোমস্টে ফিরে চোখ রাখুন জানলায়। রাতের শিলিগুড়ি শহর দেখে মনে হবে তারায় ভরা রাত যেন, অনেক নীচের শহরের আলো ঝিকমিক করে জ্বলে সারা রাত।
পিক সিজনে পাহাড় সুন্দর, কিন্তু অফ সিজনে পাহাড়কে চেনা যায় কাছ থেকে, পাওয়া যায় একেবারে নিজের করে। জীবনে একটা বার অন্তত অফসিজনে পাহাড় যাওয়া সবার উচিত। ভিড় এড়িয়ে, নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য পাহাড়ের চেয়ে ভাল সঙ্গী আর কে?