পুজো শেষ...রাত জেগে ঠাকুর দেখা, বন্ধুদের সঙ্গে হইহই আড্ডা, গান গল্প ফুরিয়ে আসার পালা। যে যার কাজে ফিরছেন। ফিরছেন একঘেয়েমির জীবনে। এসবের মাঝে আবার বাড়তি মন খারাপ জুড়ে বসে হেমন্তের ঝুপ করে নেমে আসা সন্ধেগুলোয়। মন খাঁ খাঁ করে। ফাঁকা ফাঁকা লাগে। এ মন খারাপের দাওয়াই হতে পারে ছোট্ট কোনও উইকেন্ড ট্রিপ। শনি-রবির সঙ্গে একটা দিন ছুটি ম্যানেজ হয়ে গেলে তো কথাই নেই। আর এরকম ছোট ট্রিপের জন্য উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি গ্রাম বা আধা শহরগুলোর তুলনাই নেই। এডিটরজির দর্শক-পাঠকদের জন্য আজ রইল দিন দুয়েকের কালিম্পং সফরের মিষ্টি একটা প্ল্যান। দেখুন তো, পছন্দ হয় কিনা।
কলকাতা থেকে এনজেপি-র যে কোনও ট্রেন বা বাগডোগড়া বিমানে নেমে একটা গাড়ি ভাড়া করে কালিম্পং পৌঁছে যাওয়া কোনও ব্যাপারই না. এবার, কোথায় থাকবেন, তাই তো? অনেক জায়গাতেই থাকতে পারেন। হোটেল-হোম স্টে প্রচুর রয়েছে কালিম্পং-এ। তবে রাজ্য সরকারের মর্গান হাউজে থাকার সুযোগ পেলে সেই সুযোগ ছাড়া কিন্তু খুব বোকামি। কালিম্পং সার্কিট হাউজের কাছেই দুরপিনদাড়া পাহাড়ের ওপরে দাঁড়িয়ে রহস্যময় মর্গ্যান হাউজ।
প্রায় ১০০ বছর আগের বিশাল দোতলা বাড়ি। চেনা ইংরেজ স্থাপত্য। কাছে-পিঠে সকলেই চেনেন ভুতুড়ে বাড়ি হিসেবে। কালিম্পং-এর কুয়াশার মাঝে আলো আধারিতে দাঁড়িয়ে থাকা মর্গ্যান হাউজ নিয়ে কতো গল্প। গত শতাব্দীর তিরিশের দশকে জর্জ মর্গ্যান সাহেব বাড়িটি বানিয়েছিলেন নিজের বিয়ে উপলক্ষে। মর্গ্যানের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী না থাকায় বাড়িটি এবং সংলগ্ন জমিটি ভারত সরকার অধিগ্রহণ করে। ১৯৭৫ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দফতরের অধীনে চলে আসে মর্গ্যান হাউজ।
মর্গ্যান সাহেবের ভূত সত্যিই চোখে দেখেছে, এমন মানুষ পাওয়া না গেলেও, দেখার সম্ভাবনাই যেন গোটা চত্ত্বরের গা ছমছমে ভাবটা কয়েকগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। ভূতের দেখা না পেলে বুঝি মর্গ্যান হাউজ যাওয়াই বৃথা? কখনও না। সরকারি এই বাড়ির যে কোনও একটা ঘরে থাকার অভিজ্ঞতাই দারুণ। চাইলেই ভেবে নেওয়া যায়, সময় থমকে আছে আশি নব্বই বছর আগে। ঘরের মোটা দেওয়াল, উঁচু উঁচু ছাদ, গা বেয়ে ওঠা গুল্ম লতা, কালচে হয়ে আসা ইট, ঘরে ইংরেজ আমলের কাঠের আসবাব, ফায়ার প্লেস, সব মিলিয়ে অনবদ্য পরিবেশ।
দিন দুয়েক যদি মর্গ্যান হাউজের বাইরে এক পাও না বেরোন, একঘেয়ে লাগার অবকাশই নেই। বাগানজুড়ে ফুটে আছে নানা রং-এর অ্যাজালিয়া-গোলাপ, ক্যামেলিয়া। পাইনের বনের ফাঁক দিয়ে আকাশে চাইলেই কখনও উঁকি মারবে রূপসী কাঞ্চনজঙ্ঘা।
আর মর্গ্যান-মোহ কাটিয়ে শহরে পা রাখলে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে কালিম্পং-এর সব বাহারি ক্যাফে। হাতে বই নিয়ে কফিতে চুমুক দেওয়ার জন্য আদর্শ শহর কালিম্পং। দু পা যেতে না যেতেই একের পর এক ক্যাফে। কোনও একটায় বসে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে দেখাটাও দারুণ অভিজ্ঞতা।
শান্তির খোঁজে কাছেপিঠে যে কোনও মনেস্ট্রিতে ঢুকে কাটিয়ে দিতে পারেন এক দেড় ঘণ্টা। বুদ্ধ মন্দির লাগোয়া মিউজিয়াম থেকে পেয়ে যেতে পারেন নানা জানা অজানা তথ্য। ফিরতি পথে সঙ্গী হিসেবে জুটে যেতে পারে কিছু পাহাড়ি কুকুর।
৯-৬ টার একঘেয়ে জীবনের বাইরে দু'টো দিনে যদি বেঁচে নিতে চান বুক ভরে প্রকৃতির কোলে, ঘরের কাছের শৈল শহর কালিম্পং কিন্তু হতাশ করবে না। ফেরার পরেও মন পড়ে থাকবে পাহাড়ের ঘন সবুজে, কুয়াশা ঢেকে আসা রাস্তায়, পাইনের বনে বনে।