আমাদের দেশ বহু ভাষা, বহু ধর্মের, বহু জাতির মানুষের দেশ। তাই সংস্কৃতিও একেক জায়গায় একেক রকম। কোথাও আবার একই দিনের প্রাসঙ্গিকতা ভিন্ন প্রদেশের মানুষের কাছে নানা রকম। এই যেমন আজকের দিনটি। দশমী বাঙালির জীবনে এক রকম, খানিকটা বিষাদের। আবার উত্তর ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে দিনটি বিজয়ের, আনন্দের।
বাংলায় অকাল বোধনের সঙ্গে রামচন্দ্রের দুর্গা পুজোর ইতিহাস জড়িত থাকলে দুর্গা বাঙালির কাছে দেবী নয়, বরং বাড়ির মেয়ে। আর এই দশমী, দুর্গার বিদায়ের দিন। নিজের বাড়িতে চারদিন কাটিয়ে মেয়ের ফিরে যাওয়ার দিন। স্বাভাবিক ভাবেই বাঙালির কাছে দেবীর বিসর্জন বিষাদের, এক অনন্ত অপেক্ষারও। ধর্ম আর সংস্কৃতি বাংলায় গা লেগে লেগেই থাকে। বিজয়া দশমী বাঙালির জীবনের শুধু কিছু ধর্মীয় আচার পালনের দিন তো নয়। বরং বাঙালির যাপনে মিশে যাওয়া একটা সত্ত্বা। ঘরের মেয়ে দুর্গার কৈলাসে ফিরে যাওয়ার দিন। চোখের জলে মেয়েকে বিদায় জানানোর দিন। ষষ্ঠীতে বোধন হয়েছিল। তারপর চারটে দিন মা-বাবার কাছে কাটিয়ে গেল উমা, সঙ্গে চার ছেলে মেয়ে। এবার ফেরার পালা। সকলের মন খারাপ, এ ওর আড়ালে সকলেরই দো চোখের কোণ মোছা। সে চোখ অপর্নার, সে চোখ আয়েশারও। দশমীর আকাশে রোদ উঠলেও, এই দিন আসলে মেঘলা, কত হাজার বছর ধরেই হয়ে আসছে এমন। লক্ষ লক্ষ মানুষের মনে বিষাদ ঘন হয়ে আসে এই দিনে।
অন্যদিকে পুরাণ অনুযায়ী, মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত যুদ্ধের পর জয়লাভ করেছিলেন দুর্গা। সেই জয়ের কারণেই 'বিজয়া দশমী' নাম। পুরাণে, বিজয়াদশমী উদযাপনের রীতিতে একটি নদী বা মহাসাগরের সম্মুখভাগে শোভাযাত্রার কথাও রয়েছে। পুজোর সঙ্গে জড়িত সঙ্গীত ও মন্ত্র সহ দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিকের মাটির মূর্তির শোভাযাত্রার শেষে মূর্তিগুলি জলে বিসর্জন দেওয়ার কথা বর্ণিত আছে পুরাণেও।
আবার রামায়ণে বর্ণিত আছে, এই দিনেই রাবণের বিরুদ্ধে রামের জয়লাভ হয়েছিল। তাই দশেরা উত্তর ভারতে উদযাপনের দিন। রাবণ পোড়ানোর চলও সেই থেকেই।
বিবিধের মাঝে মহামিলনের দেশের এটাই তো বৈশিষ্ট্য। একই দিন একেক মানুষের কাছে নিয়ে আসে একেক রকম অনুভূতি।