সদ্য প্রয়াত হয়েছেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা । সেই শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি তাঁর পরিবার-পরিজন থেকে শুভাকাঙ্খীরা । জানা গিয়েছে, মৃত্যুকালে ঐন্দ্রিলার শরীরের মারণ রোগ ক্যানসার আবার ফিরে এসেছিল । এত কম বয়সে তিন-তিনবার এভাবে ক্যানসারের ফিরে আসা অনেকেই মনেই ক্যানসার নিয়ে আতঙ্ক তৈরি করিয়েছে । এই পরিস্থিতিতে ক্যানসার নিয়ে কিছু জরুরি তথ্য দিলেন চিকিৎসক বিষাণ বসু । তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রেডিয়েশন অঙ্কোলজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর । বিষাণ বসু জানাচ্ছেন, তৃতীয় পর্যায় পর্যন্ত ক্যানসার নিরাময়যোগ্য । কিন্তু, লাস্ট স্টেজ অর্থাৎ চতুর্থ পর্যায়ে মারণ রোগ সবসময় নিরাময় করা যায় না । তিনি আরও জানিয়েছেন, একটু সচেতন হলেই প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়তে পারে ক্যানসার । কীভাবে ?
ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট করে ক্যানসার সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেছেন বিষাণ বসু । তিনি জানিয়েছেন, ক্যানসার অসুখটা যেমন খারাপ, তেমনই তার চিকিৎসাগুলোও খারাপ । তবে তাঁর মতে, অনেক ক্যানসার আছে যেগুলি প্রাথমিক পর্যায়েই বোঝা যেতে পারে । বিষাণ বসু লিখেছেন, শরীরের মধ্যে থাকা ক্যানসার বোঝা যায় না । তবে, "শরীরের বহির্ভাগের ক্যানসার একটু সচেতন থাকলেই ধরা যায়। যেমন, মুখে ঘা, গিলতে সমস্যা, স্নান করার সময় স্তনে কোনও ডেলা হাতে পড়া (বা শরীরের অন্যত্রও), যোনিদ্বার থেকে রক্তপাত (সহবাসের পর বিশেষ করে) এগুলো না বুঝতে পারার কারণ নেই। এসব হলে তড়িঘড়ি ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এদেশে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাওয়া ক্যানসার এগুলোই।" তাঁর কথায়, "আরেকটু সচেতন হলে আরও অনেক ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়তে পারে। যেমন, অনেকদিনের কাশি, পায়খানার অভ্যেসে বদল, কখনও কোষ্ঠকাঠিন্য কখনও পাতলা পায়খানা, আচমকা খিদে কমে যাওয়া, অল্প খেয়েই পেট ভরে যাওয়া - এসব হলেও ডাক্তার দেখান ।" রেডিয়েশন বা অপারেশনের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যানসার নিরাময় করা যায় । তবে, 'বিকল্প চিকিৎসাপদ্ধতি'-তে একেবারেই মত নেই তাঁর ।
বিষাণ বসু জানিয়েছেন, চতুর্থ পর্যায়ের ক্যানসার নিরাময়যোগ্য নয় । এই পর্যায়ের চিকিৎসা কেমোথেরাপি । রোগী যতদিন ওষুধ সহ্য করতে পারবেন, বা যতদিন অবধি ওষুধ অসুখটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে, চিকিৎসা চলবে ততদিন। চতুর্থ পর্যায়ের ক্যানসার নিরাময়ের জন্য এখন বাজারে প্রচুর ওষুধ এসেছে । ডাক্তারের কথায়, "সবগুলো না হলেও, এর মধ্যে বেশ কিছু ওষুধ দিব্যি কার্যকরী। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও বেশ কম। চতুর্থ পর্যায়ের ক্যানসারের রোগী আপাত-সুস্থ অবস্থায় দু-তিনবছর কাটাচ্ছেন, এমন ঘটনা বিরল নয়, যা কিনা এক দশক আগেও প্রায় অকল্পনীয় ব্যাপার ছিল। কিন্তু এই নতুন ওষুধগুলোর দাম অত্যন্ত বেশি। রোগীর এই দু'বছর আপাত-সুস্থ জীবনের মূল্য, প্রায়শই, তাঁর/পরিবারের বিগত জীবনের সমগ্র সঞ্চয়।"
তাই তাঁর পরামর্শ,ক্যানসার যত তাড়াতাড়ি ধরে ফেলা যায়, ততই ভাল । তাড়াতাড়ি নিরাময়ও হয় । চিকিৎসাপদ্ধতি কম জটিল । খরচও কম । তাই, আপনি যদি একটু সাবধান থাকেন, তাহলে ক্যানসার দ্রুত নিরাময় সম্ভব ।