'খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন, সেই কত বছর আগে ভবা পাগলা গেয়ে উঠেছিলেন,।' শীতকালে গাছের গায়ে হাঁড়ি তো বাঁধা পড়বেই, কিন্তু তার চেয়েও বেশি করে নলেন গুড়ের সঙ্গে বাঁধা পড়ে বাঙালির মন। শীত তেমন পড়ুক বা না পড়ুক, নলেনের স্বাদ যে অনন্ত! আর সেই নলেন যখন সন্দেশ, রসগোল্লার পাকে নিজেকে জড়িয়ে নেয়, তখন তো রাজযোটক! নলেন গুড়ের মিষ্টি কিনতে দোকানে দোকানে যে এতই লম্বা লাইন, সে তো আর এমনি এমনি নয়।
বিশ্ব দরবারে এবারএ স্থান পাওয়ার অপেক্ষায় বাংলার নলেন গুড়। জিআই বা জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন তকমা পাওয়ার যাবতীয় নথিপত্র কলকাতায় বসে খতিয়ে দেখেছেন দিল্লির প্রশাসনিক কর্তারা।
গুড় বা নলেন গুড়ের মিষ্টি তো কেবল পণ্যমাত্র নয়, তাতে বাংলার সংস্কৃতির শিকড় জড়িয়ে। যারা খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধেন, তাঁরাও কোনও শিল্পীর চেয়ে কম নন। আর কম ঝক্কি নাকি, গাছের মাথা সাফ করতে হবে। নলি কাটতে হবে৷ কঞ্চি ঢুকিয়ে হাঁড়ি পাততে হবে। সারারাত ধরে জমা হবে রস৷ তিন চারদিন রস জমা হওয়ার পর গাছের বিশ্রাম৷ তারও পর গাছের মাথা চেঁচে প্রথম রাতের রসের স্বাদ স্ববর্গীয়৷
আচ্ছা, নতুন গুড় থেকে নলেন গুড়, কীভাবে এল এই নাম? এ নিয়ে অনেক মত, কেউ বলবেন, নতুন শব্দটি অপভ্রংশ হয়ে 'নলেন' হয়েছে। কেউ বলবেন, খেজুড় গাছের নল কেটে এই গুড় সংগ্রহ করা হয় বলে এমন নাম, কেউ আবার বলবেন, দক্ষিণ ভারতীয় নরকু শব্দটি থেকে নলেন শব্দটি এসেছে, নরকু শব্দের অর্থ, কাটা বা ছেদন করা।
গুড়ের মতোই অতুলনীয় গুড়ের মিষ্টি। বাংলার নিজস্ব নির্মাণ৷ নতুন গুড়ের রসোগোল্লা, রসোমালাই, গুড় কলস, অমৃত কুম্ভ সন্দেশ, দুধ পুলি, গুড় পায়েস, এসব ছাড়া শীত আসে বাংলায়? গোটা পৃথিবীতে এর তুলনা নেই। মিষ্টির দোকানে দোকানে এখন ক্রেতাদের অপেক্ষা সেই আশ্চর্য সম্পদ ঘরে নিয়ে যাবার। নলেন গুড়ের মিষ্টি তো কেবল মিষ্টি নয়, বাঙালির আবেগ। আর শীতে শুধু শেষ পাতে নয়, বরন বারে বারে ক্ষণে ক্ষণেই মিষ্টি মুখ।