দুয়ারে কড়া নাড়ছে শীত কাল। আর একটু ঠান্ডা পড়লেই আর যেন কিছুতেই ঘরে মন টেকে না বাঙালির। তার উপর শীত মানেই পিকনিকের মরসুম। ইতিমধ্যেই হয়ত শীত আসার আনন্দে মাংস ভাত রেঁধে কয়েক দফা পিকনিক ছাদেই সেরে ফেলেছেন কেউ কেউ। কিন্তু জাঁকিয়ে শীত পড়লে মন চায় দুপুরের মিঠে রোদ গায়ে মেখে, চেনা জায়গা ছেড়ে খানিক দূরে কোথাও যেতে।
আর দেরি কেন তাহলে? এখন থেকেই করে ফেলুন পিকনিকের প্ল্যান। নভেম্বরের শেষ কিংবা ডিসেম্বরের শুরুতেই পিকনিকের প্ল্যান করে ফেলতে পারেন। সারাদিনের ব্যস্ততা কাটিয়ে একটা দিন আনন্দ করতে যাবেন, তাতে যেন কোনও খামতি না থাকে, তাই আগেভাগেই রুটম্যাপ থেকে টিপস রইল এডিটরজির।
আগে দেখুন ক্যালেন্ডার:
ঝটপট দেখে নিন ছুটি কবে কবে আছে। শনি, রবি কোন তারিখে পড়ছে। তার আগে পরে কোনও জরুরি কাজ রয়েছে কিনা সেটাও দেখে প্রথমেই একটা দিন ঠিক করুন। সেক্ষেত্রে যদি সপ্তাহের মাঝামাঝি একটা দিন করতে পারেন, ভিড় একটু কম পাবেন। নইলে শনি রবি তো আছেই।
হোয়াটস অ্যাপ গ্ৰুপ:
এসব ক্ষেত্রে প্ল্যান করার লোকেরও যেমন অভাব হয় না, ক্যানসেল করার লোকের অভাবও কিন্তু হয় না। সেক্ষেত্রে প্রথমেই খুলে ফেলুন হোয়াটস অ্যাপ গ্ৰুপ। কোথায় যাবেন, কে কে যাবেন, কীভাবে যাবেন, কী কী মেন্যু, কে যেতে পারবে কে পারবে না সব কথা সেখানেই সেরে নিন। সেক্ষেত্রে সকলকে আলাদা করে জানানোর চাপ থাকে না। এরপর ঠিক করে ফেলুন বাজেট আর মেন্যু।
এই কটা জিনিস ভুলবেন না:
পিকনিকে যাওয়ার আগে অবশ্যই সঙ্গে রাখুন কয়েকটা জিনিস। পিকনিকে গিয়ে কাটাকুটি বা বসে গল্প করার জন্য বসার জায়গা লাগবেই। তাই মনে করে মাদুর কার্পেট বা নিদেনপক্ষে বস্তা নিয়ে যান। সব নিয়েছেন, কিন্তু এই জিনিসটা মিস করলে আনন্দই মাটি, তাই সাউন্ড বক্সের ব্যবস্থা আগে করে রাখুন।
Every Time is Tea Time, বারবার চা-কফি করা সম্ভব নয় ,তাই অবশ্যই সঙ্গে রাখুন একটি বড় ফ্লাক্স। এক,দুবার চা করলেই সারাদিন গরম থাকবে। তাস, ব্যাডমিন্টন নিয়ে যান বাচ্চাদের সময় কাটবে ভাল। বাইরে কোথাও খোলা জায়গায় পিকনিকে, সন্ধের পর আলোর অভাব হতে পারে। একটা চার্জার লাইট সঙ্গে রাখা ভাল।
কোথায় যাবেন?
কলকাতার একেবারে কাছে ডায়মন্ড হারবার। সেখানেই রয়েছে ঐতিহাসিক পুরনো কেল্লার মাঠ। আর পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে হুগলি নদী। যা শীতের দুপুরে চড়ুইভাতির মেজাজে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য এক্কেবারে সঠিক জায়গা।
চলতি বছর পর্যটক টানতে পুরসভার উদ্যোগে নতুন করে সেজে উঠেছে এই পুরনো কেল্লার পিকনিক গ্রাউন্ড। এখানে রয়েছে বাংলো। বাংলোয় তিনটি ঘর। ভিতরে ১৫০-২০০ জনের বসে খাওয়ার জায়গা। তিন হাজার টাকা ভাড়ায় সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত কাটানো যাবে এই বাংলোয়। তবে, রাত্রিবাসের কোনও সুযোগ নেই।
বাংলোর পিছনেই রয়েছে পাঁচিল ঘেরা হাজার বর্গফুটের দু'টি ভিআইপি তাঁবু। ভাড়া দু'হাজার টাকা। এছাড়াও সাধারণের জন্য রয়েছে মোট দশটি তাঁবু। কুড়ি ফুট বাই কুড়ি ফুটের প্রতি তাঁবুর ভাড়া একহাজার টাকা। যাঁরা কোনও তাঁবু ভাড়া নেবেন না, তাঁরা ফাঁকা মাঠে বসেও পিকনিক করতে পারেন।
সব মিলিয়ে একসঙ্গে হাজার পাঁচেক মানুষ কেল্লার মাঠে বসে পিকনিক করতে পারবেন। এছাড়াও পর্যটকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পুরোনো কেল্লার পিকনিক গ্রাউন্ডে কড়া পুলিশি নজরদারিও রয়েছে।
তাহলে প্ল্যান তো ছকাই রইল, এক্সিকিউশনের দায়িত্ব কিন্তু আপনার। শীতের মিঠে রোদ গায়ে মেখে, পা ছড়িয়ে কমলালেবু খেতে খেতে গল্প হোক, কিংবা সকলে মিলে একটা দিন হৈহুল্লোড়, রান্নাবান্না , খেলাধুলো- বছরে এমন দিন কিন্তু সচরাচর আসে না, এলে তাকেই বলে পিকনিক।