সমাজ এখন শিক্ষিত, প্রগতিশীল । কিন্তু, বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের দুনিয়াতে এখনও কিছু কুসংস্কার রয়ে গিয়েছে । ২০২২-এ দাঁড়িয়ে তারই বাস্তব চিত্র দেখা গেল জন্মাষ্টমীর দিন । জন্মাষ্টমীতেই (Janmasthami 2022) ঘরে আসুক গোপাল । এই চাওয়া এখনও ঘরে ঘরে । তাই, এদিন দম ফেলার ফুরসৎ পান না ডাক্তাররা । এবছরও তার ব্যতিক্রম নয় । জন্মাষ্টমীতে সন্তানলাভের জন্য সিজারিয়ান ডেলিভারির ( cesarean delivery) হিড়িক দেখা গেল এবারও ।
মূলত, এবার বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেই এদিন সিজার বেশি হয়েছে । যাঁদের ডেলিভারির তারিখ শুক্রবারের আশেপাশে ছিল, তাঁদের অনেকেই শুক্রবার ডেলিভারির আবেদন রেখেছিলেন চিকিৎসকদের কাছে । কারও আশা পূর্ণ হয়েছে । আবারও কারও মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়নি । অনেকে তো আবার জন্মাষ্টমীর দিন সন্তানলাভের জন্য চিকিৎসকই বদলে ফেলেছেন । কলকাতার নামজাদা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার প্রায় 'হাউসফুল' । বহু বেসরকারি হাসপাতালে গড়ে দেড়-দু'গুণ বেশি সিজারিয়ান ডেলিভারি হয়েছে জন্মাষ্টমীতে । যেমন, ভাগীরথী নেওটিয়া হাসপাতালে দিনে ৬-৭টা করে সিজার হয় । শুক্রবার ১০টা সিজার হয়েছে দুপুর পর্যন্ত । বাকি বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও একই ছবি ।
আরও পড়ুন, Partha Chatterjee: পার্থ-ঘনিষ্ঠের খোঁজে ঝাড়খন্ডের হোটেলে তল্লাশি আয়কর বিভাগের, নজরে কালো ব্যাগ
জন্মাষ্টমীতে সিজারিয়ান ডেলিভারির পিছনে ব্যাখা নিয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা ?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কৃষ্ণের পবিত্র জন্মতিথিতে সন্তানলাভের জন্য অবাঙালি পরিবারেই এই সিজারিয়ানের হিড়িক দেখা যেত । তবে, বাঙালিদের মধ্যে ঘরে 'গোপাল' আনার এমন ট্রেন্ড ইদানিং চোখে পড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা । অনেকের মতে, শুধুমাত্র শুভ দিনের জন্য নয়, অনেকের মনের অবচেতনে পুত্রলাভের ইচ্ছা কাজ করে । সে জন্যই জন্মাষ্টমীর দিনটা সিজারের মাধ্যমে সন্তান আনার আবদার রাখেন । কিন্তু, লক্ষ্মী বা সরস্বতী পুজোর দিন এমন হিড়িক দেখা যায় না । সাহিত্যিক বাণী বসু এত সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন,তিনি মনে করেন না, এর পিছনে শুধুমাত্র পুত্রাকাঙ্ক্ষা থাকে । তাঁর মতে, 'নিছকই পাগলামি এবং সংস্কারাচ্ছন্ন মন এর জন্য দায়ী । সচেতন ভাবেই তাঁরা চান, কৃষ্ণের মতো পবিত্র হোক তাঁদের সন্তান।'
বৈদিক পণ্ডিত, পুরোহিতদের মতে, জন্মাষ্টমীতে জন্মালেই সন্তান কৃষ্ণের মতো হয় না । এদিন, কৃষ্ণ প্রাকৃতিক ভাবেই ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন, তারিখ বদলে তাঁর বাবা-মা সিজারের মাধ্যমে জন্ম দেননি ।