আজ বিজয়া দশমী। যদিও এ বছর বিশুদ্ধ পঞ্জিকা আর সাধারণ পঞ্জিকায় শারোদোৎসবের তিথি সব আলাদা, তবু বাড়ির পুজোয় ভাসান আজকেই। দশমীর সকাল থেকেই নানান বনেদি বাড়ির পুজোয় চলছে সিঁদুর খেলা। প্রতিমা বিসর্জনের পালাও শুরু হয়ে গিয়েছে।
দুর্গাপুরের সগড়ভাঙ্গা গোপীনাথপুর গ্রামে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের বউদের সিঁদুর খেলা ছিল দেখার মতো। দশমীতে পুজো শেষের বিষাদকে ছাপিয়ে গেল সিঁদুর খেলার আনন্দ। কেউ বাড়িতেই থাকেন, কেউ পুজোর কদিন এসেছেন বিদেশ বিভূঁই থেকে। কারোর আবার, বারো মাস ওই চত্ত্বরেই থাকা হয়, কিন্তু এমন বেঁধে বেঁধে থাকা হয় না সবার সঙ্গে। বছরের এই চারটি দিন তো ওদের একঘেয়েমির জানলায় তাজা হাওয়া।
একই ছবি টাকির চক্রবর্তী বাড়ির পুজোয়। ৩০০ বছর পূর্ণ করল সেই পুজো। ৩০০ বছরের চল মেনে বারো বেহারার কাঁধে করে টাকির ইচ্ছামতী ঘাটে এলেন মা দুর্গা। বিসর্জনের মুহূর্ত থেকেই শুরু হল বছরভরের অপেক্ষা।
১৪৩১ বঙ্গাব্দের দুর্গাপুজোর উৎসব এই বছরের মতো শেষ হল। পুরাণ অনুযায়ী, মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত যুদ্ধের পর জয়লাভ করেছিলেন দুর্গা। সেই জয়ের কারণেই 'বিজয়া দশমী' নাম। পুরাণে, বিজয়াদশমী উদযাপনের রীতিতে একটি নদী বা মহাসাগরের সম্মুখভাগে শোভাযাত্রার কথাও রয়েছে। পুজোর সঙ্গে জড়িত সঙ্গীত ও মন্ত্র সহ দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিকের মাটির মূর্তির শোভাযাত্রার শেষে মূর্তিগুলি জলে বিসর্জন দেওয়ার কথা বর্ণিত আছে পুরাণেও। যদিও বাঙালিদের মধ্যে যে বিজয়া দশমীর প্রচলন রয়েছে, তার পুরাণ-বর্ণিত কারণটি, উত্তর ভারতের বিভিন্ন অংশে অতি জনপ্রিয় এবং একইদিনে হওয়া 'দশেরা'-র থেকে ভিন্ন।
বাল্মীকি রচিত রামারণে কথিত, আশ্বিন মাসে শুক্লা পক্ষের দশমী তিথিতেই রাবণকে বধ করেছিলেন রামচন্দ্র।
ইতিহাস ও পুরাণের কাহিনি থেকে যায় তার নিজের মতো করে। জলে ভেসে যায় দুর্গা ও তার পরিবার। থেকে যায় ঐক্য ও সম্প্রীতির চিরাচরিত বার্তা। সেই বার্তা আমাদের কানে কানে বলে যায়, আলিঙ্গনে বেঁধে বেঁধে বেঁচে থাকুক মানুষ।