সময় বদলেছে। একসময় খড়ের চালায় শুরু হওয়া ঘরোয়া পুজো আজ সার্বজনীন রূপ নিয়েছে। কিন্তু বদল হয়নি পুজোর নিয়ম। ১৬০ বছর ধরে পূর্ব-পুরুষের রীতি মেনেই দেবী দুর্গা পূজিত হচ্ছেন জানাঘাটি গ্রামের বক্সী পরিবারে। তাঁদের বাড়িতেই তৈরি করা হয় দুর্গা মূর্তি।
দুর্গাপুজোর সঙ্গে সঙ্গে রীতি মেনে এই পরিবারের পুজোয় দশমীর দিন অপরাজিতা নামে একটি বিশেষ পুজো করা হয়। যেখানে পরিবারের বংশধরদের হাতে নীল অপরাজিতা ফুলের লতা বালার মতো করে পরিয়ে দেওয়া হয়। তারপর ঘটের শান্তির জল ছিটিয়ে দেওয়া হয় সকলের মাথায়। এছাড়াও এই বনেদি বাড়ির পুজোয় নিয়ম কানুনে রয়েছে নিজস্বতা। এখানে মা দুর্গার সঙ্গে যেমন থাকেন লক্ষী,সরস্বতী তেমনই এখানে অধিষ্ঠান করছেন দুর্গার দুই দাসি জয়া,বিজয়া। যদিও জয়া,বিজয়ার পুজো আলাদা ভাবে করা হয়। দেওয়া হয় অঞ্জলিও।
ভৌগোলিক কারণে এখানে শাল-কাঠ পাওয়া যায় না। সেই কারণেই প্রাচীন কাল থেকে বেল কাঠ জ্বালিয়ে আহুতি দেওয়া হয়। এখনও সেই রীতি মেনে ঐতিহ্য রক্ষা করতে শাল কাঠের পরিবর্তে সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত চার কুইন্টাল বেল কাঠ জ্বালিয়ে আহুতির আয়োজন করা হয়।
বক্সী পরিবার বহু যুগ আগে ছিল মোহান্তি পরিবার। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময় গোপীবল্লভপুর ছিল ময়ূরভঞ্জ রাজাদের অধীনে। মোহান্তি পরিবারের পূর্বসুরিদের সামজিক কাজে তাঁদের অবদান দেখে খুশি হয়ে রাজা বকশিস দিয়েছিলেন।আর সেই সময় থেকে এই পরিবার বক্সি পরিবার নামে পরিচিত হয়। নকশাল আন্দোলনের একেবারে আতুর ঘর বলে পরিচিত ছিল গোপীবল্লভপুর। পরবর্তী সময়ে মাওবাদীদের সন্ত্রাসও প্রত্যক্ষ করেছেন গোপীবল্লভপুরের বাসিন্দারা। কিন্তু কোনও পরিস্থিতিতেই বক্সী বাড়ির দুর্গা পুজা কখনও বন্ধ হয়নি।
পশ্চিম মেদিনীপুরে জানাঘাটি হলেও গ্রামটি একেবারে ঝাড়খণ্ডের সুবর্ণরেখার পাড়ে। ফলে, এই পুজোতে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ঝাড়খণ্ড, ওড়িশার কিছু পরিবারও অংশ নেয়। প্রাচীন কাল থেকেই সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে প্রসাদ খান স্থানীয় বাসিন্দারা। বাড়ি বাড়ি গিয়েও দেওয়া হয় সেই ভোগ। এই রেওয়াজ আজও রয়েছে। তবে, দু বছর করোনার কারনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোগ দেওয়া হয়নি।