আর জি করের ঘটনায় বিচার চেয়ে আন্দোলন আরও জোরদার হচ্ছে । এদিকে, একের পর এক দুর্নীতিরও অভিযোগ উঠছে । আর জি কর 'দুর্নীতির পাহাড়' । এমনটাই দাবি করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা । হাসপাতালের বেড, ওষুধ, সরঞ্জাম থেকে নিয়োগ...সবেতেই দুর্নীতির অভিযোগ । প্রবীণ চিকিৎসকরা বলছেন, গোটা সিস্টেমটার মধ্যেই ঘুণ ধরে গিয়েছে । স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরেই নতুন নতুন দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে । শুধু নিয়োগ দুর্নীতি নয়, ট্রান্সফার, পোস্টিং, প্রমোশন নিয়ে ব্যাপক টাকার খেলা চলে স্বাস্থ্য দফতরে । টাকা ফেললে, তবেই মেলে প্রমোশন । এই সময়-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে সেরকমটাই জানা গিয়েছে ।
যে যত ভাল 'নজরানা' দিতে পারবে, তার প্রমোশনও তত দ্রুত হবে । আর টাকা না দিলে, পুরনো পদেই থেকে যেতে হয় দীর্ঘদিন । টাকার কাছে হার মানে যোগ্যতা । এই সময়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে এভাবেই পদোন্নতি হয়ে থাকে । এমনটাই বলছেন শিক্ষক-চিকিৎসকরা। প্রমোশনের ফাইলে যাতে সময়মতো সই হয়ে যায়, তার জন্য নাকি লাখ লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে ।
পদোন্নতির ধাপগুলি কী কী ?
এনএমসি-র নিয়ম অনুযায়ী, RMO থেকে পদোন্নতির ধাপগুলি হল, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ও প্রফেসর । অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হতে গেলে যোগ্যতা হিসেবে এক বছর সিনিয়র রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করতে হয় । অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরের যোগ্যতা হল, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে চার বছর কাজ, বড় জার্নালে দু'টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে হবে । প্রফেসর পদে প্রোমোশনের জন্য অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে তিন বছর কাজ করতে হবে । আর বড় জার্নালে চারটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে হবে । তবে, অভিযোগ, এই নিয়ম মেনে কখনও প্রমোশনের প্রক্রিয়া হয় না ।
এই সময়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক বছরে নাকি প্রায় ৭০০ শিক্ষক-চিকিৎসক পদোন্নতির অপেক্ষায় রয়েছেন । এর মধ্যে প্রোমোশনের আবেদন করেছেন ৩০০ জন । সেলফ অ্যাপ্রাইজাল ও ইন্টারভিউ হয়ে গিয়েছে । চিকিৎসকরা বলছেন, ইন্টারভিউয়ের ২৫ নম্বরেই চলে টাকার খেলা । এমনও দেখা গিয়েছে, ইন্টারভিউ হয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত প্রমোশন লিস্টে নাম ওঠেনি ।
নজরানা হিসেবে কী কী দেওয়া হয়
লাখের নীচে কোনও কথা হয় না । প্রমোশনের জন্য কেউ দিচ্ছেন ৩-৪ লাখ টাকা, কেউ আবার ৫ বা ৬ লাখ । শুধু টাকা নয়, নজরানা হিসেবে দেওয়া হয় ফ্রিজ, এসি, টিভি গাড়ির মতো সামগ্রীও ।
উল্লেখ্য, আর জি কর হাসপাতালে দুর্নীতির অভিযোগে সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই । প্রাক্তন অধ্যক্ষকে হেফাজতে নিয়ে বেশ কয়েকটি তথ্য হাতে পেয়েছে সিবিআই । হাসপাতাল সূত্রে খবর, পড়ুয়াদের অনেকেই আছেন, যাঁদের চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও প্রাথমিক জ্ঞানই নেই । কারণ নিয়োগে অস্বচ্ছতা । প্রবীণ চিকিৎসকরা বলছেন, গোটা সিস্টেমটাতেই ঘুণ ধরে গিয়েছে । আমূল সংস্কার প্রয়োজন ।