Digha : আপনিও বহুবার গিয়েছেন 'ব্রাইটন অফ ক্যালকাটা'য়, আন্দাজ করতে পারছেন কোথায়?

Updated : Dec 09, 2024 10:43
|
Editorji News Desk

কথায় আছে বাঙালির পায়ের তলায় সর্ষে। এই জাতিকে বলা হয় ভ্রমণপিপাসু। তাই হাতে দু'দিন ছুটি পেলেই যাই যাই বাই। কলকাতার কাছে অনেক জায়গাই আছে। কিন্তু বাঙালি ছুটে যায় পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্র সৈকতে। দিঘা, কলকাতা থেকে মাত্র ১৮৫ কিলোমিটার দূরের এই সমুদ্রসৈকতই বাঙালির ইবিজা থেকে মায়ামি। বর্তমান সময় নয়, এর অনেক আগে থেকেই পূর্ব মেদিনীপুরের এই সমুদ্র সৈকত ছিল পর্যটকদের প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু তখন নাম ছিল অন্য। 

অধুনা দিঘার পূর্ব নাম কি ছিল জানেন? ইতিহাসের পাতা ঘাটলে জানা যায় এই সমুদ্রসৈকতের তখন নাম ছিল বীরকুল।

বাংলার নবাব তখন মীরকাশিম। বাংলা, বিহার ওড়িশা নিয়ে তাঁর রাজত্ব। কিন্তু বীরকুল পরগনার দায়িত্ব ছিল কোম্পানির হাতে। তৎকালীন সময় বাংলার গভর্নর জেনারেল ছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস। কাজ দেখতে গিয়েছিলেন বীরকুলে। খুঁজে পেয়েছিলেন বেলাতটের উপরে এক মনোরম ঝাউয়ের জঙ্গলকে। বঙ্গের এই প্রাকৃতিক শোভা মন কেড়েছিল হেস্টিংসের। তারপর শুধু যাওয়া আর আসা। 

গ্রেট ব্রিটেনের ছোট্ট সমুদ্র শহর ব্রাইটেন। সেই শহরেই জন্ম ওয়ারেন হেস্টিংসের। বীরকুলে গিয়ে খুঁজে পেয়েছিলেন শৈশবকে। তাই নাম দিয়েছিলেন 'ব্রাইটন অফ ক্যালকাটা'। নিজের স্ত্রীকে দিঘার অপরূপ সৌন্দর্যের কথা জানিয়ে চিঠিও লিখেছিলেন তিনি। এরপর থেকে মাঝেমধ্যেই গরম থেকে রেহাই পেতে এই সৈকতে আসতেন। একটি বাংলোও তৈরি করেছিলেন তিনি। যদিও হেস্টিংস সাহেবের ওই বাংলো পরে সমুদ্রের গ্রাসে চলে যায়। 

হেস্টিংস পরবর্তী সময়ে আরও এক ইংরেজের আবির্ভাব হয়েছিল এই সমুদ্রসৈকতে। তিনি পর্যটক নন, ছিলেন ব্যবসায়ী। নাম জন ফ্রান্স স্মিথ। ১৯২৩ সালে এই জায়গাকে তিনি এতটাই ভালবেসে ফেলেছিলেন যে সাড়ে এগারো একর জমি লিজ নিয়ে ফেলেন। তৈরি করে ফেলেন নিজের বাংলো। নাম দেন রানসউইক হাউস।

বছরের ছয় মাস তিনি এই বীরকুলে থাকতেন।  তিনি এই বীরকুল নিয়ে একটি ভ্রমণকাহিনী লেখেন। তাঁর বিভিন্ন লেখা থেকেই ধীরে ধীরে ইংরেজ সাহেব এবং তৎকালীন বঙ্গের বাবুরা বীরকুলের কথা জানতে পারেন। ধীরে ধীরে সমুদ্র উপকূলবর্তী দুর্গম বীরকুল পরগনা পরিচিতি পায়। সেই কারণেই স্নিথ সাহেবকে বলা হয় দিঘার জন্মদাতা। 

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের উদ্যোগে দিঘা রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে জায়গা পায়। ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়ের উদ্যোগেই 'বীরকুল' হয়ে ওঠে দিঘা। রাজ্য সরকার ১৯৭০ সালে দিঘা একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরতে শুরু করে। তারপর থেকে, দিঘায় ধীরে ধীরে কিন্তু উল্লেখযোগ্য পরিকাঠামগত উন্নয়ন হয়। ১৯৮০ সালের পর থেকে দিঘা পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

প্রথমে কলকাতা থেকে দিঘা যাওয়া কিন্তু অতটা সহজ ছিল না। মাঝে রূপনারায়ণের ওপর কংক্রিটের সেতু  তৈরি হয়নি তখনও। এমনকি কয়েক দশক আগে পর্যন্ত হাওড়া থেকে কোনও ট্রেন সরাসরি দিঘা যেত না। মাত্র ১৭০ কিলোমিটার পেরোতে লেগে যেত প্রায় অর্ধেক বেলা। কিন্তু এখন বাঙালির কাছে দিঘা যাওয়া জলবৎ তরলম। 

এত বছরেও দিঘার আকর্ষণ এক ফোঁটাও কমেনি বাঙালির কাছে। বরং বেড়েছে। গ্রীষ্মের ছুটি হোক, দোল কিংবা বড়দিন। বেড়াতে যাওয়া মানেই বাঙালির প্রথম পছন্দ দিঘা। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুরের বীরকুলের কীভাবে দিঘা হয়ে উঠল? এর উত্তর সঠিকভাবে জানা যায় না। যদিও অনেকের মত, দিঘার মোহনায় বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে বীরকুলের একটি নদী চম্পার সংযোগ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আগে এই জায়গাকে দিঘি বলতেন। মনে করা হয়, সেই দিঘি থেকেই ধীরে ধীরে এই জায়গাটি দিঘা নামে পরিচিতি লাভ করে।

DIGHA

Recommended For You

editorji | লোকাল

West Bengal Weather Update: শীতের আমেজ কার্যত গায়েব, চোখ রাঙাচ্ছে নিম্নচাপ, বড়দিনের ছুটিতে বৃষ্টি?

editorji | লোকাল

Firhad Hakim: ফিরহাদের বিতর্কিত মন্তব্য! সমর্থন নয়, জানাল তৃণমূল কংগ্রেস

editorji | লোকাল

Krishnanagar Bori Gram : নদিয়ার বড়িগ্রাম, শীত এলে আজও গাঁয়ের মেয়ে-বউরা যত্ন করে বড়ি দেন

editorji | লোকাল

Murshidabad News: এবার চিকিৎসকের বিরুদ্ধেই ধর্ষণের অভিযোগ, চাঞ্চল্য মুর্শিদাবাদে

editorji | লোকাল

RG Kar Upadate: নির্যাতিতার পরিবারের হয়ে মামলা লড়বেন না বৃন্দা গ্রোভার, কারণ জানালেন স্বয়ং আইনজীবী