একাই ১০০ তৃণমূল (Tmc)। বুধবার রাজ্যের ১০৮ পুরসভার ফলে ১০২টি পুরসভা দখল করল রাজ্যের শাসক দল। এরমধ্যে ৩১ পুরসভা বিরোধীশূন্য। এদিন প্রকাশিত ফলে চমক বলতে পাহাড়ে হামরো পার্টির (Hamaro Party) উত্থান আর সিপিএমের (Cpm) প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক অনিল বিশ্বাসের নিজের জেলা নদিয়ার তাহেরপুরে পার্টির ঘুরে দাঁড়ানোর ঘটনা। তবে এই জয়ের পরেও শাসক দলের কাছে কাঁটা হতে পারে পুরুলিয়ার ঝালদা, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা, পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা এবং হুগলির চাঁপদানি পুরসভা। কারণ, এই চারটি পুরসভাই ত্রিশঙ্কু (Hung)। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, কোথায় গেল বিজেপি (Bjp) ? বিধানসভা ভোট পরবর্তী সময় থেকে নিম্নমুখী তাদের রাজনৈতিক গ্রাফ। আর এবারের পুরভোটের ফলে একেবারে শূন্য ভারতীয় জনতা পার্টি। উত্তরপ্রদেশের শেষ দফার নির্বাচনের আগে বারাণসীতে প্রচার করবেন তৃণমূল নেত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বারাণসী (Varanashi) যাওয়ার আগে পুরভোটের ফল প্রকাশের পর রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা জানালেন তিনি। টুইট করে মমতা লেখেন, 'আমরা যেন দায়িত্ব, নম্রতা, আনুগত্য ভুলে না যাই'। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিধানসভা ভোটের আগে থেকে রাজ্যবাসীর জন্য তৃণমূল নেত্রীর যে কর্মযজ্ঞ শুরু করেছিলেন, এই পুরভোটের ফলেও তা অব্যাহত থাকল। বিশেষ করে সরকারি প্রকল্প যে রাজ্যবাসী উপকৃত, সেটাই যেন ফের একবার প্রমাণ করল এদিনের পুরভোটের ফল।
উল্টোদিকে এই পুরভোট ফের প্রমাণ করল বঙ্গ রাজনীতিতে যে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে গেরুয়া শিবির। বিশেষকরে যে উত্তরবঙ্গকে তারা নিজেদের শক্ত ঘাঁটি বলে দাবি করে, সেখানেও এবার তারা ব্যর্থ। দার্জিলিঙে তাদের সাংসদ। কিন্তু সকাল থেকে ইভিএম খুলতে একটি ওয়ার্ডেও জিততে পারেনি বিজেপি। প্রায় একই অবস্থা দিলীপ ঘোষের খড়গপুর, শুভেন্দু অধিকারীর কাঁথি আর বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বালুরঘাটেও। নিজের ওয়ার্ডেই বিজেপিকে জেতাতে পারেননি রাজ্য বিজেপির সভাপতি। যদিও ভোট শেষের পর থেকেই শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছিল বিজেপি। তার প্রতিবাদে ১২ ঘণ্টার বনধও ডাকা হয়েছিল। যা মাঝপথেই তুলে নিতে হয়। রাজনৈতির মহলের দাবি, মাথাভারী নেতৃত্বের কারণেই এই পুরভোটে বিজেপির পতন। আরও একটা নির্বাচন। সেইসঙ্গে আরও একবার দেখিয়ে দিল রাজ্যে গেরুয়া শিবিরে সংগঠনের ঢিলেমির ছবি। প্রতিটি ভোটের আগেই প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ এখন বিজেপির অন্দরে রোজের ছবি। তার প্রভাবও উত্তরবঙ্গে পড়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের মত।
আরও পড়ুন : পুরভোটে তৃণমূল দাপট চলছেই, এবার বিরোধীহীন ৩১ পুরসভা
এই পুরভোটের আগে প্রার্থী নিয়ে তৃণমূলের অন্দরের কাজিয়াও প্রকাশ্যে এসেছিল। কিন্তু ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ঠিক সময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শক্ত হাতে তা ধরে নিয়েছিলেন। যার প্রতিফলন এদিনের ফল। ঠিক যে যে জায়গায় গত বিধানসভা ভোটে তৃণমূলকে শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিল বিজেপি, ঠিক সেই জায়গাতেই বিজেপিকে টেক্কা দিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। সরকারি প্রকল্পকে কাজে লাগিয়ে চেষ্টা করেছে মানুষের মন জয়ের। আর তাতেই সফল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক মহলের মতে, এর উপর বাড়তি পাওনা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইমেজ। যা এই ভোটে আগাগোড়া কাজে লাগিয়েছেন শাসক দলের সব স্তরের নেতারা। তাই নির্দল কাঁটা উপরে ফেলে ১০০-এর বেশি আসন জিততে তারা সফল হয়েছে বলেই দাবি রাজনৈতিক মহলের।
এসবের মধ্যেই রাজ্য রাজনীতিতে ফের প্রাসঙ্গিক বামেরা। গত কলকাতা পুরভোট থেকে তাঁদের গ্রাফ বেড়েই চলেছে। শিলিগুড়ি পুরনিগম হাতছাড়া হলেও, এই সবুজ ঝড়েও মধ্যেও তার ধরে রাখল নদিয়ার তাহেরপুরের পুরবোর্ড। এমনকী, বিজেপি থেকে বেশি ওয়ার্ডে জিতে বিরোধী শক্তি হিসাবেও উঠে এল।