২১ ফেব্রুয়ারি নয়। খাতায় কলমে ৪ ফেব্রুয়ারি হলে কী হবে! ফেসবুকে বাঙালির ভাষা দিবস ছিল যেন এই দিনেই। নেপথ্যে বাংলা মিডিয়াম বিতর্ক। সেই বিতর্ক নিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলার বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই।
সম্প্রতি, একটি বাংলা বেসরকারি সংবাদমাধ্যমে আয়োজিত বিতর্কে এক জনপ্রিয় রেডিও জকি আজকের প্রজন্মের বাংলা মাধ্যমে (Bengali medium school) পড়া নিয়ে একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তা নিয়েই আপাতত তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া (Social Media)। ওই আরজে-র মন্তব্যের প্রেক্ষিতে পক্ষে বিপক্ষে মতামত জানাচ্ছেন শয়ে শয়ে ফেসবুক ব্যবহারকারী।
বিতর্কসভায় ওই মহিলা আরজে (Radio Jockey) প্রশ্ন তোলেন 'আজকে যদি বেংগলি মিডিয়ামে কেউ নিজের সন্তানকে পড়ায়, তাহলে সে কি কোনও ইন্টারভিউ ক্র্যাক করতে পারবে? সবার কী মনে হয়? সবাই কী ভাবছেন?"
জাতীয় পুরস্কারজয়ী পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘মিডিয়ামের সঙ্গে ভূতের যোগাযোগ আছে, ভবিষ্যতের নয়।’ শ্রীলেখা মিত্র এনিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও শেয়ার করে বলেন ‘‘কর্পোরেট দুনিয়া বলতে ঠিক কী বোঝায় সেটা আমি বুঝতে পারলাম না।’’ অভিনেত্রীর দাবি, কেবল মাত্র ভারতেই এখনও ইংরেজির প্রতি এত দুর্বলতা, ইংরেজি না জানলে তাঁকে অশিক্ষিতের পর্যায়ে ফেলা হয়। সাংবাদিক-গায়ক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের জানালেন, তিনি বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করেছেন।
পরিচালক অনীক দত্ত এর প্রেক্ষিতে একটি বাংলা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন ইংরেজি ভাষার প্রতি আমাদের দুর্বলতার অন্যতম কারণ লর্ড ম্যাকলে। আজও আমাদের উপরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্যাসাগর, রামমোহন রায়দের থেকেও তাঁর প্রভাব বেশি। তিনি সূক্ষ্ম ভাবে হীনমন্যতার যে বীজ পুঁতে দিয়ে গিয়েছেন তার থেকে আজও মুক্ত হতে পারিনি আমরা।
বাংলা ভাষার কিংবদন্তি সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় অবশ্য সমর্থন করেছেন ওই আরজে-কেই। তাঁর মত, বিষয়টি দুঃখের হলেও স্বীকার করতেই হবে ইংরেজি না জানলে এখনও নিজের সমাজেই যেন ব্রাত্য বাঙালি। এখনও যাঁরা জলের মতো ইংরেজি বলতে বা লিখতে পারেন তাঁদের আমরা বিশেষ মর্যাদা দিই। এবং এর থেকেই প্রমাণিত, ইংরেজ চলে গেলেও আমাদের দাসত্বের মনোভাব আজও বজায় রয়েছে।
অভিনেতা রাহুল অবশ্য ওই আরজের মন্তব্যের বিপক্ষেই সুর চড়িয়েছেন, একাধিক ভাষা শিখলে আমাদেরই উপকার। কিন্তু কখনও এটা ঠিক নয়, বাংলা ভাষায় বা মাধ্যমে যারা পড়েছেন তাঁরা উন্নতি করতে পারবেন না।’’ রাহুলের বক্তব্য, লাখ পড়ুয়া বাংলা মাধ্যমে পড়ছেন। এই বার্তা তাঁদের কতটা হীনমন্যতার কারণ হবে এক বারও কি ভেবে দেখেছেন ওই আরজে।
এই সময়ের জনপ্রিয় লেখিকা দেবারতি মুখোপাধ্যায়ও একটি সুদীর্ঘ পোস্ট করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁর বক্তব্য, ইংরেজি একটি ভাষা, কিন্তু শিক্ষার মাপকাঠি নয় কখনওই। নিজের সন্তানকেও তিনি বাংলা মাধ্যমেই পাড়াচ্ছেন বলে জানিয়েছেন এক পাঠকের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে।