'আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি...?'
১৯৪৮ সালে পাকিস্তান (Pakistan) সরকার ঘোষণা করে যে, উর্দুই (Urdu) হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। ক্ষোভে ফেটে পড়েন পূর্ব বাংলার কোটি কোটি বাঙালি (Bengali)। ১৯৫২ সালের শুরুতে বিক্ষোভ তুঙ্গে ওঠে। আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা (Dhaka) শহরে মিছিল, সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সরকারি আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Dhaka University) ছাত্ররা মিছিল শুরু করেন। মিছিল যত এগোল, তত যেন ফুলেফেঁপে উঠল। হাজার হাজার মানুষের সমুদ্র ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ নির্বিচারের গুলিবর্ষণ করে। রাজপথে লুটিয়ে পড়েন রফিক, সালাম, জব্বার ও বরকত। চার শহীদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে।বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সমগ্র পূর্ব বাংলা।
২২ এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি গোটা পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন শফিউর রহমান শফিক, রিক্সাচালক আউয়াল এবং অলিউল্লাহ নামক এক কিশোর। শহীদদের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে ছাত্ররা তৈরি করেন শহীদ মিনার।
একটানা গণবিক্ষোভ কার্যত অভ্যুত্থানের চেহারা নেয়। পাকিস্তানের সরকার শেষ পর্যন্ত পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হয়। ১৯৫৪ সালের ৭ই মে পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা (Bangla) অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হয়। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণীত হলে বাংলা ও উর্দু যৌথভাবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উল্লিখিত হয়।
ঐতিহাসিক মাতৃভাষা আন্দোলনই পরবর্তীকালের স্বাধীন বাংলাদেশের(Bangladesh) রাজনৈতিক ভিত প্রতিষ্ঠা করেছিল। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের শৃঙ্খল ছিঁড়ে জন্ম নেয় নতুন রাষ্ট্র- বাংলাদেশ। তার রাষ্ট্রভাষা হয় বাংলা। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেয়।