কালীপুজোর সঙ্গে শ্মশানের সম্পর্ক অনেকটা গল্প ও কবিতার মতো। যেন, একে অপরের পরিপূরক। দশমহাবিদ্যার প্রথম মহাবিদ্যা হল কালী। বিভিন্ন শ্মশানঘাটে কালীর যে রূপটির পুজো (Kalipuja 2022) করা হয়, তা'শ্মশানকালী' নামে পরিচিত। বাংলার প্রায় সব শ্মশানেই শ্মশানকালীর পুজো হয়। কোথাও প্রতিদিন, কোথাও বা বাৎসরিক পুজোর রেওয়াজ। কথিত আছে, রাজ্যের বহু শ্মশানে আগে ভিড় (Kalipuja rituals) জমাতেন তান্ত্রিক ও সাধকরা। শবসাধনায় বসতেন অনেকে। বাড়িতে শ্মশান কালী (Kalipuja traditions) পুজো হয় না। বাড়িতে যে কালী পুজো করা হয়, তাঁকে বলা হয় রক্ষা কালী বা শ্যামা কালী। যেখানে পুরোহিতদেরই পুজো করার নিয়ম। আবার, শ্মশান কালীর সাধনা করেন মূলত তন্ত্রসাধক শ্মশানবাসীরা।
আরও পড়ুন: আলোর উৎসবেও আঁধার বাগনানে, প্রদীপের বিক্রি নেই, অথৈ জলে মৃৎশিল্পীরা
শ্মশানকালীর রূপ (Kalipuja 2022) নিয়েও একাধিক কাহিনি প্রচলিত আছে। রয়েছে একাধিক বিবরণও। তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ রচিত বৃহৎ তন্ত্রসার অনুসারে এই দেবীর ধ্যানসম্মত মূর্তিটি নিম্নরূপ:
শ্মশানকালী দেবীর (Kalipuja 2022) গায়ের রং কাজলের মতো কালো। তিনি সর্বদা শ্মশানে বাস করেন। তার চোখদুটি রক্তপিঙ্গল বর্ণের। চুলগুলি আলুলায়িত, দেহটি শুকনো ও ভয়ংকর, বাঁ-হাতে মদ ও মাংসে ভরা পানপাত্র, ডান হাতে সদ্য কাটা মানুষের মাথা। দেবী হাস্যমুখে নরমাংস খাচ্ছেন। তাঁর গায়ে নানারকম অলংকার থাকলেও, তিনি উলঙ্গ এবং মদ্যপান করে উন্মত্ত হয়ে উঠেছেন।
শ্মশানকালীর আরেকটি রূপে তার বাম পা’টি শিবের বুকে স্থাপিত এবং ডান হাতে ধরা খড়্গ।
এই শ্মশানকালীর পুজোর নির্দিষ্ট নিয়মও (Kalipuja rituals) রয়েছে। রাজ্যে এমন একাধিক শ্মশান রয়েছে, যেখানে শবদেহ না আসা পর্যন্ত পুজো শুরু হয় না। দক্ষিণ কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশানেও এমনটাই রেওয়াজ। একদিকে শ্মশানকালী পুজো (Kalipuja 2022) হবে আর অপরদিকে চলবে শবদেহের দাহ। কেওড়াতলায় এই পুজো করেন ডোমেরা। পুজোর নির্দিষ্ট সময়ে একটি মৃতদেহ দাহ করার জন্য এনে রাখা হয়।
এমন রেওয়াজ রয়েছে রাজ্যের অন্যপ্রান্তের শ্মশানেও। দুর্গাপুর বীরভানপুরের মহাশ্মশানের কালীপুজোও তেমনই এক পুজো। এখানকার দেবী পূজিত হন বৈষ্ণব মতে। এখানে ছাগল বলি প্রথা নিষিদ্ধ। জানা যায়, শ্মশানে শব দেহ না আসা পর্যন্ত দেবীর ভোগ নিবেদন করা হয় না।