Barun Biswas : 'বরুণ' শব্দের একটি অর্থ হল সূর্য। যে সূর্য শুধু আলো দেয়, তাই-ই নয়। যে না থাকলে জীবনেরও কোনও অস্তিত্ব থাকে না। উত্তর ২৪ পরগনার সুটিয়ার বাসিন্দা ও মিত্র ইনস্টিটিউশনের প্রয়াত শিক্ষক বরুণ বিশ্বাস (Barun Biswas) ঠিক এই কারণেই সার্থকনামা। তিনি ছিলেন সেই শিক্ষক, যিনি প্রতিটি অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে এক অমোঘ জাদুকরের ভঙ্গিতে (Happy teachers day 2022) অবলীলায় জ্বেলে দিতে পারতেন আলো। তিনি ছিলেন সেই মানুষ, যিনি প্রায় সূর্য-সম বা তার থেকেও কিছু বেশি তেজ ও জেদ নিয়ে বদলে দিতে পেরেছিলেন বহু মানুষের জীবন।
২০১২ সালের ৫ জুলাই বরুণকে (Barun Biswas) গোবরডাঙা স্টেশন চত্বরে গুলি করে মারে দুষ্কৃতীরা। সেই সময়ে গাইঘাটায় একের পর এক গণধর্ষণের ঘটনার বিরুদ্ধে এলাকার প্রতিবাদী মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ওই সব ঘটনায় কয়েক জন দুষ্কৃতী ধরা পড়ে। সাজাও হয়। কয়েকটি মামলায় মূল সাক্ষী ছিলেন বরুণ। বছর চল্লিশের শিক্ষক বরুণ হয়ে ওঠেন প্রতিবাদের মুখ। সে কারণেই দুষ্কৃতীরা তাঁকে সরিয়ে দিল, এই অভিযোগে উত্তাল হয় সুটিয়া।
আরও পড়ুন: সাইরাস মিস্ত্রির অকাল প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে কোনও আন্দোলন নয়, বরং একক প্রচেষ্টায় তিনি গড়ে তুলেছিলেন বিপ্লব। নারীর মর্যাদা রক্ষার্থেই হোক বা নদী বাঁচানোর আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়াই হোক, বরুণ বিশ্বাস (Barun Biswas) এক এবং অনন্য। আর সেই আন্দোলনের জন্যেই প্রাণ খোয়াতে হয়েছিল তাঁকে।
২০০০ সালে মাত্র ২৮ বছর বয়সে তৈরি করেন ‘সুটিয়া গণধর্ষণ প্রতিবাদ মঞ্চ’। এই মঞ্চের উদ্যোগেই দিকে দিকে জনসভা করতে শুরু করেন। সাধারণ মধ্যবিত্ত রোগা চেহারার ছেলেটির বক্তব্যে উজ্জীবিত হয় এলাকার অন্যান্য যুবক-যুবতীরা। এলাকার সেই যুবক-যুবতীদের নিয়েই লড়াই শুরু করেন বরুণ। ধর্ষিতা মহিলাদের মানসিক শক্তি জোগানো থেকে শুরু করে তদন্তকাজে পুলিশকে সাহায্য করা, সবটাই চলতে থাকে জোরকদমে।
তিনি শিক্ষক (Happy teachers day 2022) এবং সমাজকে শিক্ষা দিতে নিজেই হয়ে উঠেছেন এক অনুপ্রেরণা। মৃত্যুর ঠিক ১০ বছর বাদেও তাই একইরকমভাবে প্রাসঙ্গিক তিনি। আজও প্রতিটি অন্যায়ের চোখে চোখ রেখে দাঁড়ানোর স্পর্ধার নাম বরুণ বিশ্বাস।
আরও একটি জরুরি কথা ফের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। মানুষের পাশে দাঁড়াতে গেলে মানুষকে ঈশ্বর হতে হয় না, কোনও দলতন্ত্র অথবা দার্শনিক উপলব্ধিরও প্রয়োজন পড়ে না। দরকার শুধু মনোবল এবং ভাল কাজ করার মত চারিত্রিক দৃঢ়তার।
শিক্ষক দিবসে এমন একজন শিক্ষকের শিক্ষাকে ধরে রাখাই হোক সমাজের অঙ্গীকার, এটিই একমাত্র চাওয়া।