কবিতা থেকে গান, গল্প থেকে প্রবন্ধ, ছবি থেকে নাটক- সব বিভাগেই তাঁর বুড়ো আঙুলের ছাপ রেখে গিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু, শুধু শিল্পেই নয়, খেলাধুলো নিয়েও তাঁর উৎসাহ ছিল অপরিসীম। এমনকি, ভারতে প্রথম জুডোখেলার চর্চা শুরু হয়েছিল তাঁর মাধ্যমেই!
যে জাপানি শব্দ থেকে 'জুডো' শব্দটির উদ্ভব, সেটি হল, জুজুৎসু। যার আক্ষরিক অর্থ, ‘দ্য সফট অ্যান্ড জেনারেল আর্ট’ বা ‘মৃদু মার্জিত শিল্প’। নিরাপত্তার কারণেই, বিশেষ করে মেয়েদের স্বনির্ভর আত্মরক্ষার বিকল্প হিসেবে জুজুৎসুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে, এটা মনেপ্রাণে অনুভব করতেন রবীন্দ্রনাথ।
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের কাছাকাছি সময়ে শান্তিনিকেতনে এসে জাপানের বিশিষ্ট জুডো প্রশিক্ষক সানো জিন্নোসু দেখা করেন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে। তারপর রবীন্দ্রনাথের অনুরোধেই শান্তিনিকেতনে জুডো প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছিলেন জিন্নোসু। শুরু হয়েছিল দেশের প্রথম জুডোচর্চা। এই চর্চাকে কেন্দ্র করেই ভারত ও জাপান দুই দেশের সংস্কৃতির মধ্যে অপূর্ব যোগসূত্র তৈরি হয়েছিল সেই সময়।
শান্তিনিকেতনের তৎকালীন ছাত্রদের মধ্যেও জুডো শেখার জন্য প্রবল আগ্রহ ছিল। তাতে সামিল হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের (Rabindranath Tagore) পুত্র রথীন্দ্রনাথও। প্রায় বছরখানেক শান্তিনিকেতনে ছিলেন জাপানি প্রশিক্ষক। পরে জিন্নোসু জাপানে ফিরে গেলেও জুডোর কলা কৌশল স্পর্শ করেছিল কবিগুরুর মনকে। তাই আর্থিক বাধা সত্ত্বেও শান্তিনিকেতনে ফের জুডো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। তাঁর অনুরোধে জুডো প্রশিক্ষক শিনজো তাকাগাকিকে শান্তিনিকেতনে পাঠিয়েছিলেন জাপানের মনীষী ওকুরা। ১৯২৯-এর নভেম্বরে শান্তনিকেতনে এসে বিশ্বভারতীর জুডো শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তাকাগাকি। যাঁকে এশিয়ায় 'জুডোর জনক' বলা হয়।