একটা সময় ছিল জুহুর রাস্তা ধরে যাঁরা আসতেন, তাঁরা একবার এই বাড়িটার সামনে থমকে দাঁড়াতেন। দু চোখ ভরে দেখতেন, আর প্রণাম ঠুকে চলে যেতেন। কারণ, এই বাড়ির মধ্যে থাকতেন এক রাজা। তাই রাজবাড়ির সামনে এসে তাঁকে হৃদয় ভরে প্রণাম জানত, তাঁর ভক্তরা। আর সেই রাজা নিজেকে উজার করে দিতেন ভক্তরা মন ভরাতে। তিনি কিশোর কুমার। তাই শোনা যায়, একটা সময় মুম্বইয়ে গৌরীকুঞ্জকে বলা হত রাজবাড়ি। একবিংশ শতকের আলোকবর্ষের গতিতে ছোটা বাণিজ্য নগরীর গৌরীকুঞ্জ আজও রাজবাড়ি হয়েই থেকে গেল। আদি মালিক ছিলেন সঙ্গীতের রাজা। আর নব্য মালিক হলেন আধুনিক ক্রিকেটের কিং। সম্প্রতি হাত বদল হয়েছে গৌরীকুঞ্জের। কিশোর কুমার থেকে এই বাড়ির মালিক এখন বিরাট কোহলি। কিন্তু গৌরীকুঞ্জের আলিসানায় কোনও টোল পড়েনি। বরং নতুন সাঁজবাতিতে ছুঁইয়ে পড়ছে সাবেকিয়ানা।
বুধবারের ভোরে বিশ্বকাপ খেলতে অস্ট্রেলিয়া চলে গিয়েছেন এই বাড়িতে অধুনা রেস্তোরাঁর মালিক বিরাট কোহলি। যাওয়ার আগে নিজের ব্র্যান্ড ওয়ান-এইটের জন্য করে গেলেন প্রোমোশন। রাজধানী দিল্লিতে তাঁর প্রথম রেস্তোঁরা। মুম্বইয়ে দ্বিতীয়। বিরাট জানালেন, যাঁরা মনে করেন মুম্বইয়ে মতো ব্য়স্ত শহরে জায়গা পাওয়া যায় না, তাঁরা ভুল করেন। আসলে জায়গা খুঁজে নিতে হয়। আর ঠিক সেই কাজটাই করা হয়েছে গৌরীকুঞ্জের ক্ষেত্রে।
তিনি ক্রিকেটার, তিনি ওয়ার্কহোলিক। আবার তিনি ভোজন রসিক। খেতে এবং খাওয়াতে দুটোই ভালবাসেন। তাই নতুন রেস্তোরাঁর প্রোমোশনে ডুব দেন স্কুল জীবনে তাঁর ব্রেড পাকোড়ার ভালবাসায়। আবার সটান জানিয়েদেন প্যারিস নয়, এই সময়ে দাঁড়িয়ে তাঁর ভাললাগে ভূটানের খাবার। কারণ, ছোট্ট ওই দেশের মানুষজন খাবার তৈরি করেন বাড়িতে চাষ করা সবজি থেকে। তাই ওই দেশে বেড়াতে গিয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন কোহলি। মাটিতে বসে বেশ জমিয়ে খেতেন ভূটানের খাবার।
তবে খাওয়া নিয়ে তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় একজনকে দেখে তিনি অবাক হয়েছিলেন। সেই ব্য়ক্তি বাংলার ঋদ্ধিমান সাহা। যিনি বাটার চিকেন, নানের সঙ্গে অবলীলায় খেতে পারেন দুটি রসগোল্লা। আবার ভাত-মাংসের সঙ্গে খেয়ে ফেলেন এক চামচ আইসক্রীম। একদা নিজের সঙ্গীকে জিগেস করেছিলেন বিরাট, এটা কী করে সম্ভব ? তাতে ঋদ্ধির উত্তর ছিল, এ ভাবেও খাওয়া যায়।
কিশোর কুমারের উত্তরাধিকার। আর সেখানে কিশোর কুমার থাকবেন না। তাই সুর-জলসায় ভেসে এল 'মেরে মেহবুব...।' পূর্বসূরীর নয়, গৌরীকুঞ্জের অন্দরমহল গমগম করল, নতুন রাজার কণ্ঠে।