তিনি রাশিয়ার অ্যাসেট। তাঁকে গুপ্তচর হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। ক্ষমতায় এসে সেই তুলসী গ্যাবার্ডকে আমেরিকার গোয়েন্দা প্রধান বানিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। CIA, FBI-সহ ১৮টি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা তাঁরই নির্দেশে চলবে। তবে কি বিশ্ব রাজনীতির সমীকরণ পাল্টাবে! সম্প্রতি, বাংলাদেশে আটক সন্ন্য়াসী চিন্ময়কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তুলসীর কাছে আবেদন গিয়েছে।
সেনেটে ৫২-৪৮ ভোট পেয়ে আমেরিকার গোয়েন্দা প্রধানের দায়িত্ব পেয়েছেন তুলসী গ্যাবার্ড। তাঁর এফিসিয়েন্সি, কর্মদক্ষতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। দীর্ঘদিন আমেরিকার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছেন। অভিজ্ঞতার নিরিখেও দুঁদে অফিসার তিনি। কিন্তু তাঁকে গোয়েন্দা প্রধান হিসেবে নিয়োগ করে নাকি রাশিয়ার ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছে আমেরিকা। এমনই মনে করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাইজি মেরির মতে, এটা নতুন প্রশাসনের অন্যতম ভুল সিদ্ধান্ত। যার ফল ভুগতে হবে।
তাঁর কেরিয়ার ঠিক কেমন
২০০৩ সালে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের ন্যাশনাল গার্ড হিসেবে কর্মজীবনের শুরু। ২০০৪-০৫ সালে ইরাকে পাঠানো হয় তাঁকে। ২০০৮ সালে কুয়েতে আর্মি মিলিটারি পুলিশ অফিসার হিসেবে ট্রেনিং নেন। ২০১৫ সালে প্রথমবার সেনেটের কংগ্রেসমেন হিসেবে নির্বাচিত হন। পাশাপাশি তিনি হাওয়াই সীমান্তে ন্যাশনাল গার্ডের মেজরও হন। ২০২১ সালে মার্কিন সেনাবাহিনীর লেফনেন্যান্ট কর্নেল হন তুলসী গ্যাবার্ড।
তুলসীকে নিয়ে কেন বিতর্ক!
২০১৭ সালে সিরিয়া সফরে যান তুলসী গ্যাবার্ড। অফিসিয়াল নথি অনুযায়ী, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সঙ্গে দুবার বৈঠক করেন তুলসী গ্যাবার্ড। বাশার আল আসাদের সব নীতিই আমেরিকা বিরোধী। তিনি রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ। তুলসী কীভাবে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করলেন! তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তুলসী যদিও নিজেই স্বীকার করেন, তিনি বৈঠক করেছেন। কারণ তাঁর মনে হয়েছে, সিরিয়ার মানুষের জীবন তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সিরিয়ায় আমেরিকার ট্রুপ নিয়েও খুশি ছিলেন না তিনি। (Byte)
বারবার প্রকাশ্যে সিরিয়া নিয়ে মুখ খুলেছেন। বারবার সিরিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তির পক্ষে সওয়াল করেছেন তিনি। এসবের ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর প্রোফাইলে নজরদারি করা হত বলেও অভিযোগ তুলেছিলেন তুলসী। তাঁর পোস্ট কমিউনিটি গাইডলাইন ভাঙছে বলে, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর প্রোফাইল ব্লক করা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। তবে ২৪ বছর পর বাশাদের সরকারের পতন হয়। রাশিয়া দাবি করেছে, ইস্তফা দেওয়ার পর ডামাস্কাসে আশ্রয় পেয়েছেন বাশাদ। তাই তুলসীর সঙ্গে রাশিয়ার কানেকশন দৃঢ় হয়েছে।
আমেরিকার গোয়েন্দা প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পর তুলসী গ্যাবার্ডকে শুভেচ্ছাও জানিয়েছে রাশিয়া। যা সত্যি আমেরিকার ইতিহাসে বিরলতম। তবে ক্ষমতায় এসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ মেটাতে এগিয়ে এসেছেন। পাশাপাশি আরও দুই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইজরায়েল ও হামাসের যুদ্ধবিরতিতেও বড় ভূমিকা রাখছে আমেরিকা। শনিবার সকালে গাজা সীমান্তে তিন বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। যাদের মধ্যে একজন মার্কিন-ইজরায়েলি বংশোদ্ভূতও ছিলেন। এর আগে ইজরায়েল হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, তিন বন্দীকে না ছাড়লে, যুদ্ধবিরতি ভাঙবে তারা। রেড ক্রস সোসাইটির হাতে তুলে দেওয়া হয় তিন বন্দীকে।
মধ্যপ্রাচ্য়ের সমস্যার সমাধান হলে তুলসীর কাজ করা অনেকটাই সহজ হবে। সহজ হবে দক্ষিণ এশিয়া। তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আগেভাগেই দেখা করে নিলেন তুলসী। তাঁদের সম্পর্ক অনেকদিনের। একবার মোদীর হাতে ধর্মগ্রন্থ গীতা তুলে দিয়েছিলেন তুলসী। আগেও মার্কিন সফরে আলাপ ছিল। এবারও মোদীকে স্বাগত জানালেন মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান। বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে মাথা গলাবে না আমেরিকা। মোদীকে কথা দিয়েছেন ট্রাম্প। জঙ্গি সংগঠন তৈরি করা নিয়ে পাকিস্তানের নিন্দাও করেছেন প্রেসিডেন্ট। ভারত-চিন সীমান্তের সমস্যা সমাধানে মধ্য়স্থতা করার প্রস্তাবও দিয়েছে আমেরিকা। যদিও সেই প্রস্তাবে সম্মতি দেয়নি ভারত। তবে ট্রাম্পের আমলে তুলসীর মাথাব্যথার একমাত্র চ্যালেঞ্জ চিন।