ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের ক্ষমতায় আসতেই পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কে জোর দিয়েছেন। আর তাতেই চাপে পড়েছে ইউক্রেন। কিয়েভকে যুদ্ধের সব সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে ওয়াশিংটন। যার ফলে ইউক্রেনকে এবার আত্মসমর্পণ কতেই হবে। এমনই মনে করছে ইউক্রেন। অভিযোগ, আক্রান্তদেরই হামলাকারী হিসেবে দেখাতে চাইছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ভায়েস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স।
সম্প্রতি হোয়াইটহাউজের ওভাল অফিসে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই বৈঠকে সাংবাদিকদের সামনেই তর্কে জড়িয়ে পড়েন দুই প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প প্রকাশ্য়ে জানিয়ে দেন, ইউক্রেনই যুদ্ধবিরতি চায়নি। ইউক্রেনই এই যুদ্ধের জন্য় দায়ী। তাঁরাই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্লট তৈরি করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই কথার প্রতিবাদ করেন জেলেনস্কি। কিন্তু ওই বৈঠকের পরই ইউক্রেনের সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেয় আমেরিকা। রাশিয়াও আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াতে শুরু করে। ট্রাম্প সেদিন বৈঠকে জানান, যদি আমেরিকা সাহায্য় না করে, দুই সপ্তাহের মধ্যে ওই যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যাবে। আমেরিকা সাহায্য় বন্ধ করায়, সেটাই যেন হতে চলেছে।
ইউক্রেনের সংসদীয় বিদেশ বিষয়ক কমিটির প্রধান ওলেকসান্দ্র মেরেজকো জানিয়েছেন, আমেরিকার সাহায্য় বন্ধ করার অর্থ পুতিনকে সাহায্য় করা। অর্থাৎ, আমেরিকা ইউক্রেনকে আত্মসমর্পণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রাশিয়ার দাবি মেনে নিতে বাধ্য করছেন। তিনি জানিয়েছেন, ইউক্রেনের উপর রাজনৈতিক ধাক্কা দিতে চাইছে আমেরিকায ১৯৩৮ সালে মিউনিখ চুক্তির থেকেও এই পদক্ষেপ খারাপ বলে তুলনা করেন তিনি। তিনি জানান, চেকোস্লোভাকিয়াকে সেই সময় আক্রমণকারী হিসেবে দেগে দেওয়া হয়নি। এবার আক্রান্ত যারা হয়েছে, তাদেরকেই হামলাকারী বলা হচ্ছে।
ক্ষমতায় এসেই ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিক দেশের অনুদান বন্ধ করে দিয়েছেন। এতদিন ইউক্রেনের অনুদান ছিল। ইউক্রেন-আমেরিকার খনিজ চুক্তির সম্ভাবনা বাতিল হতেই অনুদান বন্ধের নির্দেশ দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। মাথায় রাখতে হবে, সৌদি আরবে এই যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে একই টেবিলে বৈঠকে বসে আমেরিকা। রাশিয়া আমেরিকাকে আশ্বস্ত করেছে, তাদের কাছে এমন কিছু খনিজ দ্রব্য় আছে, যা গোটা বিশ্বে নেই। অর্থনৈতিক চুক্তি হলে, লাভবান হবে আমেরিকা। ইউক্রেন খনিজ চুক্তি রাজি না হতেই, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল আমেরিকা। তবে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি জেলনেস্কি কিছুটা নমনীয় হন, তা হলে এখনও পরিস্থিতি হালকা হতে পারে।
ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য় বন্ধ করা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ওয়াশিংটন। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তিচুক্তি নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। আমেরিকা চায়, তাদের পার্টনাররাও তাইই চাইবে। হোয়াইটহাউজের এক আধিকারিকার মতে, আমেরিকা সেই কারণেই সামরিক সাহায্য় বন্ধ করেছে। যাতে দুই দেশে শান্তি ফিরে আসে। ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস সিমিহ্য়াল জানিয়েছেন, "আমাদের সামরিক শক্তি ও সরকারের নিজস্ব ক্ষমতা আছে। ফ্রন্টলাইনে থেকে পরিস্থিতি সামলাতে হবে।"তবে আমেরিকার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ঠিক রাখা নিয়েও বার্তা দিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, "আমেরিকার সঙ্গে বিভিন্ন চ্য়ানেলের মাধ্যমে শান্তভাবে কূটনৈতিক বার্তালাপ চালাবে কিয়েভ। আমাদের একটাই পরিকল্পনা। বাঁচার জন্য় জিততে হবে। যদি আমরা জিতি, তো ভাল। হারলে অন্য়ের সিদ্ধান্তের বলি হতে হবে।"