নয়াদিল্লিতে ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরশুলা ভন দের লেয়েন। ইউরোপের দেশগুলি ভারতের উপর অনেকটাই নির্ভর করতে চাইছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ২০ জন সদস্য় ভারতের সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, পিযূষ গোয়েল- সহ একাধিক ক্য়াবিনেট মন্ত্রী থাকবেন এই বৈঠকে। আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের সঙ্গে ইউরোপের দেশগুলির কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে একাধিক চুক্তি নিয়ে কথা হবে।
ক্ষমতায় এসেই একের পর এক সিদ্ধান্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবার রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছে আমেরিকা। আর তাতেই চটেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এতদিন পর্যন্ত ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে ইউরোপ। গ্রেট ব্রিটেন-সহ ন্যাটো সদস্য়ের দেশগুলি আমেরিকার নীতিই মেনে চলছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে এক মাসের মধ্যে সব কূটনৈতিক সমীকরণ বদলে দিয়েছেন। আমেরিকা সফরে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অনুরোধ সেভাবে রাখেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবৈধ অভিবাসন, অতিরিক্ত শুল্কনীতি নিয়ে সুরাহা হয়নি। পাশাপাশি, US এইডের ফান্ড নিয়ে সমস্য়ায় পড়েছে কেন্দ্র। নির্বাচনে ভোটার টার্ন আউটের জন্য় আমেরিকা থেকে টাকা এসেছে এই দেশে। সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দিকে আঙুল তুলেছেন ট্রাম্প। একদিকে যেমন আমেরিকা আছে, তেমনই ভারতের তিন প্রতিবেশীকে নিয়েই উদ্বেগ রয়েছে ভারতের। পাকিস্তান, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মঞ্চে বারবার ভারত বিরোধী হাওয়া তুলেছে। আর তাদের প্রত্য়ক্ষ মদত দিচ্ছে চিন। আমেরিকা-রাশিয়ার সঙ্গে চিন হাত মেলালে, সমস্য়ায় পড়বে। তাই এই বৈঠক থেকেই নিজেদের ভবিষ্য়ত সুনির্দিষ্ট করে নিতে চাইছে ইউরোপের দেশগুলি ও ভারত।
ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট ভন দের লেয়েন নয়াদিল্লিতে পৌঁছনোর কয়েকঘণ্টা আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইউরোপের দেশগুলির পণ্য় রফতানি করতে গেলে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এমনই পরিকল্পনা করছেন তিনি। ট্রাম্প জানান, আমেরিকাকে চাপে ফেলার জন্যই ইউরোপিয়ান ব্লক তৈরি করা হয়েছে। ভন দের লেয়েন নয়াদিল্লিতে নেমে এক্স প্ল্য়াটফর্মে পোস্ট করেন, "রেষারেষি ও প্রতিযোগিতার এই সময় বিশ্বস্ত বন্ধু প্রয়োজন। ইউরোপের জন্য, ভারতের মতো দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক পার্টনারশিপ করা দরকার। ভারতের সঙ্গে স্ট্র্য়াটেজিক পার্টনারশিপকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাওয়ার জন্য়ই নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আলোচনা হবে।" এই বৈঠকে আলোচনা হতে পারে কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজমের মতো ইস্যু। তবে নয়াদিল্লি এই বিষয়টি নিয়ে ইউরোপিয়ান কমিশনের সঙ্গে অন্য় কোনও মঞ্চে বৈঠক করতে পারেও বলে মনে করা হচ্ছে। বাণিজ্য চুক্তির সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে এক মঞ্চে আলোচনায় কোনও লাভ হবে না। এই কার্বন বর্ডার অ্য়াডজাস্টমেন্ট মেকানিজম একটি শুল্ক। কার্বনের মাত্রা যে সব আমদানীকৃত দ্রব্য়ে বেশি, তাতে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হবে। সিমেন্ট, অ্য়ালুমিনিয়াম, ফার্টিলাইজার, কেমিক্যালের মধ্য়ে হাইড্রোজেন, লোহা, স্টিল ভারত থেকে আমদানী করলে কর দিতে হবে।
এছাড়াও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলির সঙ্গে টেলিকমিউনিকেশন, সিক্স জি, AI, নিয়ে কথা হতে পারে। প্রতিরক্ষা খাতেও একাধিক চুক্তি হতে পারে। লোহিত সাগরে ভারতীয় নৌ-সেনার সঙ্গে ইউরোপের দেশগুলির যৌথ মহড়া করতে পারে। তাতে রাজি হলে নৌবাহিনীর শক্তি অনেকটাই বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। ইউরোপের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত প্রকল্পে ভারতও যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে, তারও প্রস্তাবও দেওয়া হতে পারে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ভারতের সঙ্গে এই বৈঠক থেকে বেশ কয়েকটি প্রত্য়াশা নিয়ে এসেছে। আমেরিকা-রাশিয়া নির্ভরতা কমাতে চাইছে ইউরোপ। ইউরোপ চাইছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যদি একই টেবিলে বসে, তবেই রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য় চুক্তিতে রাজি হবে ইউরোপিয়ান দেশগুলি। নয়াদিল্লিও নিজেদের অবস্থান ঠিক করে দিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন একই টেবিলে বসলেই সমাধান হবে। ইউরোপের দেশগুলির মধ্য়ে পণ্য় রফতানি ও আমদানির সবথেকে বড় পার্টনার ভারত। ২০২৩-২৪ মরশুমে পণ্য়ের ১৩৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য় বাণিজ্য় হয়েছে ভারত ও ইউরোপের দেশগুলির। সার্ভিস ট্রেড গত এক দশকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ শতাংশ। ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য় হয়েছে ভারত ও ইউরোপের দেশগুলির।