একদিকে দেশের মাটিতে হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ঘিরে প্রশ্ন। অন্যদিকে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রবল আন্তর্জাতিক চাপ। এই দুয়ের জাতাকলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব কেমন হবে, তা স্পষ্ট করতে পারলেন না বাংলাদেশের উপদেষ্টা সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুস। একদিকে তিনি দিল্লির সঙ্গে বন্ধুত্ব চান। আবার তিনিই চান ভারত থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক বাংলাদেশের জন্য ভিসা দেওয়ার কেন্দ্র। ফলে, ভারতের প্রতি বাংলাদেশের এই দ্বিচারিতা নিয়ে বিস্মিত কূটনৈতিক মহল। তাদের মতে, ঘরোয়া রাজনীতির চাপে এখন দিশেহারা ইউনুস। যার প্রভাব তাঁর সিদ্ধান্তেও প্রতিফলিত হচ্ছে।
২৬ নভেম্বর বাংলাদেশের বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল সনাতনী নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে। তারপর থেকে তোলপাড় বাংলাদেশ। চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারির প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন সংখ্যালঘুরা। অভিযোগ, জুটেছে পাল্টা অত্যাচার। হাসিনার সরকারের পতনের পর এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে গিয়ে বিদেশ সচিব পর্যায়ে বৈঠক করেছেন বিক্রম মিশ্রি।
দু দেশের বিদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর উপদেষ্টা সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুসের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন তিনি। কূটনৈতিক মহলের খবর, ওই বৈঠকেই বিক্রমকে বাংলাদেশের উপদেষ্টা সরকারের প্রধান ইউনুস জানিয়েছেন, ভারত সবসময় তাঁদের বন্ধু। ঢাকা চায় এই বন্ধুত্ব আরও মজবুত হোক। কিন্তু দিল্লিকে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়কে দূরে থাকতেই অনুরোধ করেছেন ইউনুস।
কূটনৈতিক মহলের মতে, বাংলাদেশের মাটিতে হিন্দুদের বিষয়টিকে বারবার তাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যু বলেই আন্তর্জাতিক মঞ্চের কাছে রাখতে চাইছে ঢাকা। তারা বোঝাতে চাইছে, অশান্তির পিছনে নয়, রয়েছে বহিশক্তি। কিন্তু তারা কারা ? তা কিন্তু স্পষ্ট করতে পারেনি ইউনুস সরকার।
কূটনৈতিক মহলের দাবি, ভারতের ক্রমাগত চাপের কাছে আর পেরে উঠছে না বাংলাদেশ। তাই দিল্লিকে পাল্টা আক্রমণে ইউনুসের ঢাল হয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টি। দেশের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা কার্যত গুছিয়ে নিয়েছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। সম্প্রতি তিনি পাক হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। রোজই ভারতকে টার্গেট করে হুমকি দিচ্ছেন বিএনপি নেতারা।
এই অবস্থায় এবার দিল্লি থেকে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা কেন্দ্র বন্ধ করার প্রস্তাব দিল বাংলাদেশ। এই ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে অনুরোধ করেছেন মহম্মদ ইউনুস। তাঁর দাবি, বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে ঢাকা বা অন্য কোনও প্রতিবেশী দেশে সরানোর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের অনুরোধ করা হয়েছে। আর এখানেই প্রশ্ন তুলেছে দিল্লি।
হাসিনা সরকারের পতনের পর বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রির এই বাংলাদেশ সফরকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, ভারতের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে চাইলেও ইউনুসের শর্ত, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে হাসিনার মন্তব্যকে সমর্থন করতে পারবে না দিল্লি। দূরে থাকতে হবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু থেকেও।