গত একবছর থেকে অস্থির বাংলাদেশের পরিস্থিতি। দিনকে দিন সেই দেশে লালিত হচ্ছে ভারত বিদ্বেষ। গত অগাস্টে বাংলাদেশে আওয়ামী লিগের সরকারের পতন। ভারতের প্রতিবেশী দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে নয়াদিল্লি। কী হবে আগামী দিনের সমীকরণ, তা নিয়ে সংশয় ছিল। এই নিয়ে বাংলাদেশকে কড়া বার্তা দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আগামী দিনে বাংলাদেশের ভবিষ্য়ত কী হবে! আমেরিকার নয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে কি বাংলাদেশ নতুন কোনও সুবিধা পাবে! তা জানার অপেক্ষায় ছিল তামাম বাংলাদেশ। কিন্তু ওভাল হাউজে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়ে দিলেন, বাংলাদেশ নিয়ে তিনি কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না। সব সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্যই ছেড়ে দিলেন আমেরিকার নয়া প্রেসিডেন্ট। বাংলাদেশ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে আর বাধা থাকছে না ভারতের। কিন্তু কতটা কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবে, তা ঠিক করবে নয়াদিল্লি।
সম্প্রতি হাসিনা সরকারের আমলে 'আয়নাঘর'-এর ছবি সামনে এনেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। বুধবারই নির্বাচিত গণমাধ্যম ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে নিয়ে 'আয়নাঘর পরিদর্শন করেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস। আগারগাঁও, কচুক্ষেত ও উত্তরায় তিনটি গোপন বন্দিশালা পরিদর্শন করেন তিনি। সরকারের দাবি, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে ওই বন্দিশালাগুলি ব্যবহার করা হত। গত ১৫ বছরে একাধিক ব্যক্তিকে ওই বন্দিশালায় আটকে রেখে নির্যাতন করা হত হত বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা দফতর DGFI। ইউনূস জানান, জঙ্গি বলে চিহ্নিত করে নিরপরাধ মানুষদের ওই টর্চার সেলে নির্যাতন করা হত। এই আয়নাঘর নিয়ে সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে আওয়ামী লিগ। তাঁদের দাবি, সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে হাসিনার দল। যদিও এই নিয়ে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক সন্দেহ প্রকাশ করে লেখেন, "সত্যিই যদি আয়নাঘর থেকে থাকে, তা হলে তা প্রকাশ্যে আনতে ৬ মাস লাগল কেন।" কেউ আবার তার পাল্টা লিখছেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে যে কোনও মূল্য়ে দেশে ফিরিয়ে এনে আজীবন আয়নাঘরে বাসিন্দা করে রাখা হোক। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, বাংলাদেশের পরিস্থিতির দিকে নজর ঘোরাতেই এই আয়নাঘর-সফর করেছেন ইউনূস।
গত কয়েকমাসে ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির পর বারবার প্রকাশ্যে এসেছে তিস্তা চুক্তি। সূত্রের খবর, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবার এই তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারতকে শায়েস্তা করতে চিনের সাহায্য় চাইছে। তিস্তা পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে দিয়ে সিকিম হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভারতে ৩০৫ কিলোমিটার দীর্ঘপথ পার করেছে তিস্তা। তিস্তা প্রকল্পে জলবণ্টন চুক্তি বাংলাদেশের জন্য় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই তিস্তা চুক্তি নিয়ে কখনও চিনকে কিছু জানায়নি বাংলাদেশ। এবার মহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার তিস্তা চুক্তি নিয়ে চিনের সঙ্গে কথা বলতে চাইছে। যার ফলে উদ্বেগ বাড়তে পারে ভারতের।
ইউনূস সরকারের আমলে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা বিপন্ন। যা বারবার দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে বাংলাদেশের। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইসকনে ভাঙচুরে বারবার উদ্বেগ বেড়েছে। দেশদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল বাংলাদেশ ইস্কনের প্রাক্তন সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েও গ্রেফতার হন ইসকনের আরও দুই সন্ন্যাসী। বাংলাদেশে ইসকনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা নিয়ে মামলা হয়। যদিও সেই আর্জি খারিজ করে দেয় বাংলাদেশের হাই কোর্ট।
গত কয়েক মাসে একাধিকবার নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে ভাষাদিবস পালিত হয় কলকাতা-সহ রাজ্যের একাধিক জেলায়। জানা গিয়েছে, এবার মেদিনীপুরের উরস উৎসবেও বাংলাদেশ থেকে বিশেষ ট্রেন আসবে না। প্রতিবছর বাংলাদেশের রাজবাড়ি থেকে মেদিনীপুরে এই উৎসবে বিশেষ ট্রেন আসত। ২০২১ ও ২০২২ সালে কোভিডের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। গত দুই বছর ভারত-বাংলাদেশ বিশেষ ট্রেন চলেছে। এবার বন্ধ থাকবে দুই দেশের ট্রেন চলাচল।
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে ২০২০ সালে মার্কিন মসনদে আসেন জো বাইডেন। এরপরই আমেরিকার সমীকরণ পাল্টে যায়। এবার ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ফিরে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রশাসনে পালাবদল হতেই অনেকগুলি তথ্য উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে, USA ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের হাত ধরেই উত্তপ্ত হয়েছে একাধিক দেশের ঘরোয়া রাজনীতি। বিভিন্ন মহাদেশে সমীকরণ পাল্টে গিয়েছে। বাংলাদেশের পালাবদলের নেপথ্য়েও নাকি বড় ভূমিকা আছে USA ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের। ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার ক্ষমতায় আসার পরই এই USAID-এর সব ফান্ড বন্ধ করার কথা ঘোষণা করেছে। এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরই বাংলাদেশের পরিস্থিতি শান্ত হতে পারে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।