বাঙালি নাকি আত্মবিস্মৃত জাতি। পুরনো ঐতিহ্য ধরে না রেখে অবহেলা করে, এমন অভিযোগ আছে। ক'টা বাড়িতে এখন রেডিও শোনা হয়? গোটা শৈশব কেটে যায় এখন চৌকো বাক্সের ছবিটা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে দেখে। তবে ব্যাতিক্রম এই একটা দিন। বলা ভালো একটা ভোর। আর তাঁর নেপথ্যের নায়ক এই মানুষটি। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। বাঙালি নিজের সংস্কৃতি ভুলেছে, রীতি রেওয়াজ ভুলেছে, শুধু এই মহালয়ার ভোরটা এখনও ভুলতে পারেনি। এই মানুষটার গলায় মহিষাসুরমর্দ্দিনী শুনে ঘোর নাস্তিকেরও গায়ে কাঁটা দেয়, চোখে জল আসে।
বীরেন্দ্রকৃষ্ণের জন্ম ১৯০৫ সালে। তিনি ছিলেন একাধারে বেতার সম্প্রচারক, নাট্যকার, অভিনেতা ও নাট্য পরিচালক। কলম ধরতেন বীরুপাক্ষ নামে।
১৯৩২ এ আকাশবাণীতে প্রথম সম্প্রচারিত হয়েছিল মহিষাসুরমর্দিনী। প্রতিবার লাইভ সম্প্রচারিত হত এই অনুষ্ঠান। শেষবার সম্প্রচারিত হয় ১৯৭২ এ। মহিষাসুরমর্দিনীর রচনা বাণী কুমারের, সংগীত পরিচালনায় ছিলেন পঙ্কজ মল্লিক।
শোনা যায়, স্তোত্রপাঠের সময় আবেগে যখন তাঁর গলা বুজে আসত প্রতিবার, চোখ দিয়ে অঝোরে জল পড়ত, তাই তো নয় দশক পার করেও এত জীবন্ত, এত বাঙময় এই সৃষ্টি।
বিশ্বায়ন আমাদের চারপাশটা বদলে দিচ্ছে বড় দ্রুত। পালটে যাচ্ছে আবেগ, ভালবাসার ধরন, মান অভিমান সব কিছু। এরই মধ্যে কেমন শাশ্বত অনুভূতি রয়ে গেছে বছরের কেবল একটা দিন নিয়ে। মহালয়ার অলৌকিক একটা ভোর, আর সেই সঙ্গে বহু যুগের ওপার হতে ভেসে আসা একটা গলা।