Kalipuja: নদীয়ায় এখনও হয় ১১০ বছরের ডাকাতে কালীপুজো

Updated : Oct 28, 2022 19:14
|
Editorji News Desk

নদীয়ার মাজদিয়ার ঘোষপাড়ায় এখনও জাগ্রত ডাকাতে কালী। দীপান্বিতা কালীপুজোয় ধুমধাম করে পুজো হচ্ছে এবারেও। ১১০ বছরের প্রাচীন এই কালীপুজো ঘিরে আছে একাধিক রোমহর্ষক গল্প।

কেন জাগ্রত নদীয়ার এই ডাকাতে কালী! লোকমুখে শোনা যায়, গোটা গ্রামের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। অভাব-অনটন কাটতে চাইত না গ্রামবাসীদের। দুবেলা দুমুঠো অন্ন সংস্থান করতে হিমসিম খেতে হত। এই করুণ অবস্থা থেকেই গ্রামের কিছু তরতাজা যুবক সিদ্ধান্ত নেন, তাঁরা ডাকাতি করেই রোজগার করবেন। তখন দেশে ব্রিটিশ শাসন চলছে। চারদিকে উত্তপ্ত পরিস্থিতি। একদিন গ্রামের এই যুবকরা ব্রিটিশদের মালবাহী ট্রেন থেকে কাপড়ের বান্ডিল, খাদ্যসামগ্রী লুঠ করা হল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্রিটিশ সরকারের কানে খবর যায়। শুরু হয়ে যায় তল্লাশি।

ব্রিটিশ পুলিশের কাছে বাঁচতেই মা কালীর আরাধনা করেছিল ওই ডাকাত দল। অলৌকিক ভাবে সেবার ব্রিটিশ পুলিশ খুঁজে পায়নি তাঁদের। পুলিশ ফিরে যাওয়ার পরদিন ছিল কালীপুজো। জঙ্গল থেকে বেরিয়ে একটি বেল ও নিম গাছের পাশেই বেদি বানিয়ে মা কালীর পুজোর আয়োজন করে এই যুবকরা। জোর করে ভূদেব মালাকার নামে একজন প্রতিমাশিল্পীকে দিয়ে প্রতিমা বানানো হয়। গ্রামের চক্রবর্তী পরিবারের পুরোহিত প্রথম পুজো করেছিলেন।

নদী থেকে লুঠের কাপড় ও খাদ্য সামগ্রী তুলে গ্রামের মানুষের মধ্যে বিলি করে ডাকাতরা। এই ডাকাতদলে ছিলেন দুলাল প্রামাণিক ,হেমন্ত বিশ্বাস ,ভরত সর্দার ,কৃত্তিবাস মিত্র ,অবিনাশ ক্যারিয়া ,গিরীন্দ্রনাথ ঘোষ। মাজদিয়ার ঘোষপাড়ার মানুষ এখনও তাঁদের সন্মানের চোখেই দেখেন। জানালেন প্রাক্তন শিক্ষক সুকুমার ঘোষ । তিনি জানান,'ওঁরা ডাকাতি করলেও মানুষ খুন করেননি কখনও। লুঠ করা জিনিস গ্রামে বিলিয়ে দিতেন। ব্রিটিশ পুলিশের হাত থেকে মা বাঁচিয়েছিলেন বলেই শুরু হয়েছিল পুজো। এখানে মা কালী তাই ডাকাতে কালী বলেই পরিচিত। এখন সেই ডাকাত পরিবারের উত্তরসুরিরা কেউ শিক্ষক ,কেউ পুলিশ, কেউ সেনাবাহিনীতে আছেন। হেমন্ত বিশ্বাসের পরিবারের সদস্য সুনীল বিশ্বাস বর্তমানে একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তিনি জানান, সেই সময় বছরে কয়েকবার ডাকাতি করত এই দল। তবে কালীপুজোর আগে একটা বড় ডাকাতি করার রীতি ছিল। না হলে মায়ের পুজো হবে না।

একবার ডাকাতি আটকাতে পুলিশ থানায় নিয়ে গিয়ে আটকে রেখেছিল তাঁদের। থানার সামনে কম্বল ঢেকে শুয়ে ছিল সবাই। পরের দিনই কালীপুজো। রাত বাড়ছে। এই সময় এগিয়ে আসে গ্রামের কিছু মানুষ। পুলিশের নজর এড়িয়ে তাঁরা কম্বলের তলায় আশ্রয় নেয়। বাকিরা বেরিয়ে যান ডাকাতি করতে। লুঠ করা মালপত্র রেখে এসে ফের কম্বলের তলায় শুয়ে পড়ে ডাকাতদল। পুলিশ বুঝতেও পারেনি। পরেরদিন ধুমধাম করে হয় কালীপুজো।

যারা পুরনো কথা জানেন, তাঁরা এখনও মানেন এই ডাকাতদলকে। তাঁদের মতে, এরা সবসময়ই মাকে স্মরণ করত। গরীব মানুষের জন্যই ডাকাতি করত তারা। শোনা যায়, একবার কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির ট্রেজারিতেও ডাকাতি করেছে এই ডাকাতদল। রাজবাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে পাহারাদারের সামনে একজন অভিনয় করে সাহায্য চাওয়া হয়। সাহায্য করতে এগিয়ে আসলে তাকে বেঁধে রেখে ডাকাতি করে তারা। পায়ের চিহ্ন না রাখার জন্য রণপা পড়ে ডাকাতি করতে যেত এই ডাকাত দল। পাড়ি দেওয়া যেত দূর দূরান্তের পথও। ডাকাতির টাকা দিয়েই মা কালীর পুজো দিতেন।

কিন্তু কীভাবে শেষ হল এই ডাকাতির ইতিহাস! বিশ্বাস পরিবারই জানালেন সেকথা। জানা যায়, একবার কালীপুজোর আগে ওঁরা ডাকাতি করতে যান। বাংলাদেশের দর্শনা এলাকায় একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। সেখানে কর আদায়ের দায়িত্বে ছিলেন এক রানি। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ডাকাতদল হানা দিয়েছে। দরজা ভেঙে ঢোকার আগে ডাকাতরা দেখেন সামনে দাঁড়িয়ে স্বয়ং মা কালী। ডাকাতদলের উদ্দেশে বলেন, "তোরা কথা দে, আর ডাকাতি করবি না ।" পরে জানা যায় আসল কথা। ডাকাতদের শিক্ষা দিতে রানী নিজেই মা কালীর বেশে সেজে এসেছিলেন। কিন্তু সেদিনের পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় ডাকাতি।

পরবর্তীকালে গ্রামের ঘোষপাড়ায় চাঁদা তুলে মায়ের মন্দির স্থাপিত হয়। আজও ডাকাতদের সেই কালীকে ডাকাতে কালী নামে পুজো করা হয়। এখনও আছে সেই নিমগাছ। একই থানে গ্রামের মহিলারা ভক্তি ভরে আজও সকাল-সন্ধ্যা পুজো করেন। জাগ্রত কালীমন্দিরে এখনও পুজোর দিন হয় পাঁঠা বলির প্রথা আছে। এক সময় ভাতৃদ্বিতীয়ায় কাঁধে করে পুরো মাজদিয়া বাজার ঘুরে ডাকাতে কালীকে বিসর্জন করা হত। মাথাভাঙা নদীতে এখন টানা গাড়িতে হয় বিসর্জন ।

Kali Puja

Recommended For You

editorji | লোকাল

Weather Update: সকাল থেকেই হিমেল হাওয়া, শিরশিরানি জারি! বঙ্গে জাঁকিয়ে শীত কদ্দিন থাকবে?

editorji | লোকাল

New Year 2025 : থার্টিফাস্ট নাইটে নতুন শো 'ডিজে ট্রাফিক কপস', এই ভুল করলে আপনিও হতে পারেন অতিথি

editorji | লোকাল

Royal Bengal Tiger: বাংলা কাঁপানো 'জিনাত' এখন আলিপুরের চিড়িয়াখানায়, ঘরে ফেরা হবে না বাঘিনীর?

editorji | লোকাল

Mobile Recharge: কম খরচেই মোবাইল রিচার্জ, পদক্ষেপ TRAI-এর

editorji | লোকাল

RG Kar: RG কর কাণ্ডে খুন ও ধর্ষণ কাণ্ডে নয়া মোড়, নির্যাতিতার শরীরে কতটা বীর্য মিলল?