বাঁকুড়ার প্রাচীন দুর্গা পুজো গুলির মধ্যে অন্যতম কোতুলপুরের ভদ্র বাড়ির দুর্গা পুজো । কালের নিয়মে জমিদারি গেছে, সেই সঙ্গে জৌলুস হারিয়েছে ভদ্র বাড়ি। কিন্তু এই পুজোকে ঘিরে এলাকার মানুষকে আজো তাড়া করে বেড়ায় অদ্ভুত এক নস্টালজিয়া ।
কোতুলপুরের ভদ্র পরিবারের এক কালের মূল ব্যবসা ছিল লবণের আমদানি রপ্তানি । লোক মুখে প্রচলিত, এই ভদ্ররা মনসামঙ্গল খ্যাত চাঁদ সওদাগরের প্রকৃত উত্তরপুরুষ। সাত সাগর আর তের নদীতে ডিঙ্গা ভাসিয়ে ব্যবসা করতে যেত দূর দূরান্তের দেশে। লবণ ব্যবসায় ফুলে ফেঁপে ওঠা ভদ্র পরিবার আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশ বছর আগে তৎকালীন বর্ধমানের মহারাজ উদয় চাঁদ মহাতাপের কাছ থেকে কোতুলপুর লাগোয়া উর্বর ১৭ টি তালুকের জমিদারী সত্ব কিনে নেয় । একদিকে রমরমিয়ে চলা লবন ব্যবসা অন্যদিকে জমিদারীর বিপুল আয়ে কোতুলপুরে তৈরি হয় জমিদারের বিরাট এস্টেট ।
একসময় ভদ্র পরিবারের পুজোর জাঁক জমক ছিল দেখার মতো । পুজোর সময় পুতুল খেলা , রামলীলা পাঠ , যাত্রাপালা সব মিলিয়ে জমিদার বাড়ি গমগম করত । ১৮৮০ সালের ১০ অক্টোবর সপ্তমীর সকালে কামারপুকুর থেকে বিষ্ণুপুর যাওয়ার পথে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব পুজো দেখতে ঢুকে পড়েছিলেন কোতুলপুরের এই ভদ্র বাড়িতে । জমিদারী প্রথা বিলোপের সাথে সাথে ভদ্র বাড়ির কোষাগারে টান পড়তে শুরু করে । সময়ের নিয়মে এবং সংস্কারের অভাবে পলেস্তরা খসে গিয়ে এখন বেরিয়ে পড়েছে সাত মহলা বাড়ির ইটের পাঁজর। পুরনো জাঁক জমক, আরম্বর কিছুই নেই, শুধু পুরনো সময়ের দলিল হয়ে বেঁচে রয়েছে ভদ্র বাড়ির পুজো।