বাঙালি আড্ডা প্রিয় এবং ভোজনরসিক। তাই এই বাংলায় যে কোনো উদযাপন আড্ডা এবং খাওয়া দাওয়া ছাড়া জমে না। পুজোর রীতি রেওয়াজ, আচারের চেয়ে দুর্গা পুজোর চারটে দিন গড়পড়তা বাঙালির মন থাকে আড্ডা এবং খাওয়াতেই। এটাই বাংলার চার্ম। অতিমারীতে পুজোর মেজাজ আগের বছরের মতোই কিছুটা ফিকে। মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরা যদি নাও হয়, দুর্গা পুজোয় পেট পুজো কিন্তু হবেই হবে।
হালে নানা ফুড ডেলিভারি অ্যাপে ছেয়ে গিয়েছে শহর-আধা শহর। যে কোনও জিভে জল আনা পদ আপনার ড্রয়িং রুমে পৌঁছতে সময় লাগে আধ থেকে ১ ঘণ্টা। অপেক্ষাটা কমেছে ঠিকই। কিন্তু পুজোর কটা দিন যেন আলমারির তাকে নতুন জামা তুলে রাখার মতো সারা বছরের খিদে বাঁচিয়ে রাখে খাদ্যরসিকেরা। কোনোটা ফুচকা খিদে, কোনোটা অষ্টমীর ভোগের খিদে, কোনোটা আবার নবমীর কচি পাঠার ঝোলের খিদে, কোনোটা রোল খিদে, কোনোটা বিরিয়ানি খিদে।
পুজোর চারটে দিন চলে যাবে, আপনি একদিনও এগ চিকেন রোল, কিম্বা মাটন রোল খাবেন না, এরকম হতে পারে? কিমবা ধরুন ফুচকা, নামী মণ্ডপের সামনের স্টলে দাঁড়িয়ে প্রেমিকা এক হাতে শাড়ির কুচি সামলাচ্ছে, প্রেমিক মুখের সামনে ফুচকার বাটিটা ধরে আছে, এসব তো জীবনানন্দ দাশের বাংলার রূপের মতোই চিরন্তন, শাশ্বত, নয় কি, বলুন?
শহর কলকাতার অনেক মজার মধ্যে এইটে একটা মজা। খাওয়া দাওয়ায় গরিব-বড়লোক ভাগ তেমন নেই। হ্যাঁ কে কোথায় খাবেন, সেই সিদ্ধান্ত অবশ্যই যার যার ট্যাকের। কলকাতার মন এখনও বিরিয়ানিতে মজে। কারোর পাঁচতারায়, কারো আবার রাস্তার লাল কাপড়ে মোড়া স্টলে।
এছাড়া নানা মাপের কাটলেট, চাওমিন, মোমো তো রয়েইছে। মেলায় গেলে বুড়ির চুল। তবে বছরের অন্য সময় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা ক্যাফেরা এইসময় যেন কিছুটা নিষ্প্রভ, কিছুটা একলা।
ঐ যে বছরের অন্য সময় জিন্স, টপ, ট্রাউজার, ফর্মাল থাক না, এ'কটা দিন, শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার। তেমনই বছরের বাকি সময়টা ক্যাফে রঙিন, পুজোর কটা দিন ক্যাফের বাইরেটা।