একদিকে ছিলেন তৎকালীন সমাজের কেষ্টবিষ্টু, রাজা-মহারাজা আর তাঁদের মোসাহেবের দল। অন্যদিকে ভারতীয় একটা মনের সঙ্গে ইওরোপিয় মনীষা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি একা। ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঙালি জাতি যাঁকে শতাব্দীর পর শতাব্দী মনে রাখবে 'বিদ্যাসাগর' বলে। তিনি একজন খর্বকায় মানুষ। শক্তি বলতে যাঁর সম্বল দুর্জয় সাহস, অদম্য পরিশ্রম আর সুতীক্ষ্ণ মেধা। মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রামের ছেলে বাবার হাত ধরে চলে এসেছিলেন এই শহর কলকাতায়। তাঁকে নিয়ে কত মিথ! তিনি নাকি মাইলফলক দেখে শিখে নিয়েছিলেন ইংরেজি সংখ্যা, সাঁতরে পার হয়েছিলেন দুরন্ত দামোদর। ল্যাম্পপোস্টের আলোর নিচে দাঁড়িয়ে পড়তে পড়তে হয়ে উঠলেন পণ্ডিত। এখানেই তাঁর পরিচয় শেষ নয়। বাঙালির রেনেশাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আইকন তো নিছক 'পণ্ডিত' নন। পিতৃতান্ত্রিক সমাজের জাল ছিন্ন করে প্রবর্তন করলেন বিধবা বিবাহের৷ আক্রান্ত হতে হল। পরোয়া করেননি 'বীরসিংহের সিংহ শিশু'। লিখলেন বর্ণপরিচয়। যুগ যুগ ধরে বাঙালিকে মাতৃভাষা শেখাচ্ছে সে বই৷ চিরকালের জন্য ঠাঁই করে নিয়েছেন বাঙালির চেতনায়। পাহাড়ের মতো বিশাল হৃদয়, দুর্জয় মনুষ্যত্ব আর একরোখা আত্মসম্মান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেই মানুষটির আজ ১৩১ তম প্রয়াণ দিবস। এই শহর কলকাতা ছেড়ে অন্য দূরে স্বেচ্ছা নির্বাসনে এই পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুদিনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে সশ্রদ্ধ প্রণাম।