একসময় বলিউড তোলপাড় হয়েছিল ‘নেপোটিজম’ শব্দটি ঘিরে। বলিউডে স্টারকিডদের রমরমা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কঙ্গনা। ‘কফি উইদ করণ’ এর সেই এপিসোড ভাইরাল হয়ে পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। সুশান্ত সিং রাজপুতের অকালমৃত্যুর পর সেই আগুনেও আরও একটু ঘি পড়েছিল। বলিউডের তাবড় তারকাদের ছেলে-মেয়েদের নামের জুড়ে গিয়েছিল ‘নেপো কিড’ তকমা। বলিউডের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যাবে একাধিক স্টারকিডদের ডেব্যুই হয় ধামাকাদার। আর তারপর আর ফিরে তাকাতে হয় না তাঁদের। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে।
তবে টলিউডের প্রেক্ষাপটে, স্টারকিডদের পথ ততটাও মসৃন নয়। নিজেদের অভিনয়ের দক্ষতায় নিজেদের মাটি শক্ত করেছেন একাধিক তারকা সন্তান। আজ এডিটরজি বাংলার পর্দায় এ যুগের ৫ জনকে নিয়ে কথা বলা যাক, যাঁরা ‘স্টারকিড’ তকমা ঝেড়ে ফেলে, নিজেদের একজন শিল্পী সন্তান বলতেই বেশি স্বচ্ছন্দ।
ঋদ্ধি সেন: এই মুহূর্তের টলিউডের অন্যতম প্রশংসিত অভিনেতা ঋদ্ধি সেন। তাঁর বাবা প্রতিভাবান অভিনেতা কৌশিক সেন, মা রেশমি সেন। ঠাকুমা বর্ষীয়ান অভিনেত্রী চিত্র সেন। তাই বলাই বাহুল্য ঋদ্ধির রক্তেই ছিল অভিনয়। অভিনেতা সদ্য পা দিলেন ২৬ বছরে। ছোট থেকেই থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ঋদ্ধি। একাধিক মনে রাখার মতো ছবি এই বয়সেই উপহার দিয়ে ফেলেছেন ঋদ্ধি। 'কাহানী', 'ওপেন টি বায়োস্কোপ', ‘লোডশেডিং’ 'ইতি মৃণালিনী'-র মতো ছবিতে দর্শকদের মনে দাগ কেটেছেনঅভিনেতা । ইতিমধ্যেই অনুরাগ কাশ্যপের ছবিতে ডাকও পেয়েছেন তিনি। এখনও অবধি কনিষ্ঠতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসাবে ‘নগরকীর্তন’ ছবির জন্য জাতীয় পুরষ্কার ঝুলিতে ভরেছেন ঋদ্ধি। এখনও লম্বা দৌড় বাকি তাঁর।
ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়: ঋদ্ধি ঋতব্রত সমসাময়িক। এমনকি ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’ ছবিতে ঋদ্ধি-ঋতর অভিনয় আজও চোখে লেগে রয়েছে দর্শকদের। তখন তাঁরা দুজনেই অনেক ছোট, তবু অনিন্দ্যর পরিচালিত এই ছবিতে তাঁদের অভিনয় জাত চিনিয়েছিল। ঋতব্রত ইন্ডাট্রির দাপুটে অভিনেতা শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়ের ছেলে। ঋতব্রতর লেখাপড়া প্রথমে ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুলে, তারপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিষয় তুলনামূলক সাহিত্য। লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গেই অভিনয় চালিয়ে নিয়ে গিয়েছেন তিনি। ঋতব্রতর অভিনয়ের হাতেখড়ি থিয়েটারের মঞ্চ থেকে। প্রথম ছবি ‘কাহানি’ একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এরপর আর বিশেষ পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ‘জেনারেশন আমি’, ‘দূর্গা সহায়’, দ্বিতীয় পুরুষ’ , ‘বোধন’, ‘সাদা রঙের পৃথিবী’ এমন অসংখ্য ছবিতে ঋতর অভিনয়ে চোখ জুড়িয়েছে। স্টারকিড প্রসঙ্গে ঋদ্ধি একটি ইনস্টারভিউতে বলেছিলেন, স্টারকিড কথাটাই ভুল, আসলে আমার বাবা স্টার নয়, প্রথমে যেটা বললে ওটাই। আমার বাবা একজন অভিনেতা, পরিচিত এক মুখ। স্টার বলি আমরা শাহরুখ খানকে, প্রসেনজিৎচট্টোপাধ্যায় স্টার। আমার বাবা একজন অভিনেতা যিনি বহুবছর ধরে সিনেমায় কাজ করেছেন, তবে এক্ষেত্রে সুবিধাটা হল কাজ পেতে নয়, শেখার ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।’ তাঁর যুক্তি বুদ্ধি থেকে রাজ্-কাজ সব নিয়েই বাঙালি দর্শকদের অসংখ্য প্রত্যাশা রয়েছে।
রাজনন্দিনী দত্ত : রাজনন্দিনী অভিনেত্রী ইন্দ্রাণী দত্তর কন্যা। শুধু অভিনয় নয়, রাজনন্দিনী গান এবং নাচেও সমানতালে পারদর্শী। অভিনয়ের শুরুতেই বড় ব্রেক পেয়েছিলেন রাজনন্দিনী। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে ফিল্মি কেরিয়ার শুরু তাঁর। প্রথম ছবি থেকেই পরিচালকের নামের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে বেজায় বিতর্ক শুরু হয়েছিল। মায়ের থেকেই অভিনয়ের অ-আ-ক-খ শেখা তাঁর। স্টারকিড বলে কি বাড়তি সুবিধা পান রাজনন্দিনী? এর উত্তরে আনন্দবাজারকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে রাজনন্দিনী জানিয়েছিলেন, “ধরে নেওয়া যাক, ইন্দ্রাণী দত্তের মেয়ে বলে আমি একটি বা দু’টি ছবি পেতে পারি। কিন্তু আমি ভাল কাজ না করলে একের পর এক কাজ পেতাম কি?” উল্লেখ্য, রাজনীতির প্রথম ব্রেক, ‘এক যে ছিল রাজা’, এছাড়াও উড়নচণ্ডী, অসুর, পাঁচফোড়ন এমন একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
উজান গঙ্গোপাধ্যায় : অভিনেতা পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় এবং অভিনেত্রী চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ের পুত্র উজান গঙ্গোপাধ্যায়। অভিনয় তাঁকে আলাদা করে শিখতে হয়নি তাই। মাত্র ৩টি ছবিতেই অভিনয় করেছেন উজান। একটি রসগোল্লা’ ‘লক্ষ্মীছেলে’ ও ‘দিলখুশ’। তবে এতেই তিনি কার্যত বুঝিয়ে দিয়েছেন অভিনয় তাঁর রক্তে। লেখাপড়াতেও দারুণ ভাল উজান। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক হন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯ সালের সমাবর্তনে স্বর্ণ পদক পেয়েছিলেন উজান। বিশ্ব সাহিত্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরের সুযোগও পেয়েছিলেন উজান। স্নাতকোত্তরের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় 'লক্ষ্মী ছেলে'-তে অভিনয়ের প্রস্তাব পান উজান। বাবা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচালনায় প্রথম ‘লক্ষ্মী ছেলে’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
মেঘলা দাশগুপ্ত: সম্প্রতি ‘চালচিত্র এখন’ ছবিতে মা মেয়েকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছে। কথা হচ্ছে বিদীপ্তা ও মেঘলাকে নিয়ে। মেঘলা দাশগুপ্ত ছোট থেকেই অভিনয়ের পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন। বাবা পরিচালক বিরসা দাসগুপ্ত, মা বিদীপ্তা চক্রবর্তী , মাসি সুদীপ্তা চক্রবর্তী। এখানেই শেষ নয় মেঘলা চৈতালি দাশগুপ্ত-র নাতনি। অভিনয়ে ছোট ছোট পায়েই এগোচ্ছেন তিনি। তবে যাই করছেন মনে ছাপ থেকেই যাচ্ছে। তাঁর প্রথম ছবি লোডশেডিং, বেশ প্রশংসিত হয়েছিল।
তাই বলাই যায়, এই শিল্পী সন্তানরা টলিউডের লম্বা রেসের ঘোড়া। ‘স্টারকিড’ শব্দের ঝনঝনানি ছুঁড়ে ফেলে, নিজেদের প্রমাণ করার লক্ষে অবিচল থাকার শুভেচ্ছা রইল তাঁদের জন্য।