শীত পড়তে শুরু করেছে বঙ্গে। বাজারে আসতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজি। কিন্তু তাতে যে মধ্যবিত্তের মুখে হাসি ফুটেছে এমনটা কিন্তু নয়। ৫০০ টাকাতেও বাজারের ব্যাগ ভর্তি করা দুষ্কর হয়ে উঠছে।
নভেম্বরের শুরুতেই প্রতিটি সবজির দাম ঊর্ধমুখী। লঙ্কা ১৫০ টাকা, ফুলকপি ৪০-৫০টাকা, কুমড়ো ৪০-৪৫ টাকা, পটল ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে সবথেকে বেশি চিন্তা বাড়াচ্ছে আলু, পেঁয়াজ এবং টমেটোর দাম। আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকা প্রতি কেজি, টমেটো ৫০ থেকে ৬০টাকা প্রতি কেজি এবং ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।
আলু, পেঁয়াজ ও টমেটোর দাম যে হারে বৃদ্ধি হচ্ছে তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে কেন্দ্র ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার। সম্প্রতি একটি সমীক্ষা রিপোর্টে প্রকাশ গত মাসে প্রায় ১৬১ শতাংশ বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। যার ফলে শুধু পেঁয়াজ কিনতেই অতিরিক্ত টাকা খসছে সাধারণ মানুষের।
কেন পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি?
বিগত কয়েক মাস ধরে কিছু জায়গায় অনিয়মিত বৃষ্টি এবং অতিবৃষ্টির কারণে সবজি উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আর সেই কারণে আলু, টমেটো ও পেঁয়াজ দাম বৃদ্ধি হয়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। যার কারণে তৈরি করা খাবারের দামও বেড়েছে অনেকটাই।
দাম কি কমবে?
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকের ধারণা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য হ্রাসের জন্য পদক্ষেপ করতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা তার ঠিক উল্টো। ২ থেকে ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে দাম। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পরবর্তী আর্থিক বছর শুরু হওয়ার আগে বিভিন্ন সবজির দাম কতটা স্বাভাবিক হবে সেবিষয়ে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে।
এদিকে সবজির দাম বৃদ্ধি হওয়ার ফলে ভেজ ও ননভেজ থালির দামও বেড়েছে অনেকটাই। একটি সমীক্ষায় প্রকাশ, শুধুমাত্র অক্টোবর মাসেই ভেজ থালির দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ। অন্যদিকে ননভেজ থালির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ শতাংশ। এর ফলে কর্মক্ষেত্রে বা অন্যত্র গিয়ে যাঁরা নিয়মিত বাইরের খাবার খান তাঁদের অতিরিক্ত পয়সা খসাতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের অনেকেই জানিয়েছেন, একনাগাড়ে পেঁয়াজ,আলু ও টমেটোর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। যেহেতু এই তিনিটি দ্রব্য অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী সেই কারণে এই খাদ্যদ্রব্যগুলিকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। সেই কারণে বাধ্য হয়েই তাঁদের বিভিন্ন থালির দাম বাড়াতে হয়েছে।
শুধু যে সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এমনটা নয়, বিভিন্ন ডাল, মশলা,তেলের দামও অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলিয়ে তৈরি করা খাবারের দাম বেড়েছে অনেকটাই। যদিও দাম ফের নিয়ন্ত্রণে আসবে কিনা সেনিয়েও সাধারণ মানুষের অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন।
সবজি, মশলার দাম বাড়লেও নন ভেজ খাবার আইটেমের দাম সেই অর্থে অনেকটাই কম বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকেনের দাম কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। আর মটনের দাম ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকার মধ্যেই রয়েছে।
সাধারণ মানুষদের অনেকেই জানিয়েছেন, আগে যেখানে ৪০০ বা ৫০০ টাকার মধ্যে যে বাজার করা সম্ভব হত তাতে সপ্তাহের ৪ থেকে ৫দিন চালানো সম্ভব হত। কিন্তু মূল্য বৃদ্ধির ফলে ওই টাকায় সর্বাধিক ২-৩দিনের বাজার করা সম্ভব হচ্ছে।
এদিকে আমদানি শুল্ক নিয়ে বিশ্বের একাধিক দেশকে চাপে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই জানিয়েছিলেন এর ফলে একাধিক দেশ আমদানি ও রপ্তানিতে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। রাজনৈতিক মহলের মত, ট্রাম্পের এই হুমকি যতটা না ভারতকে ভাবাচ্ছে তার থেকে টমেটোর দাম নিয়েই বেশি ভাবতে বাধ্য হচ্ছে ভারত সরকার।