দেবী দুর্গার দশভূজা রূপই দেখা যায় সাধারণত । তবে, কোথাও কোথাও দেবী হন চতুর্ভুজাও । প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো নিরোল গ্রামের ব্রাহ্মণ পাড়ার সদর বাড়ির দুর্গাপুজোয় দেবী চতুর্ভুজা মৃণ্ময়ী রূপে পূজিত হন । আসলে, একেক জায়গায় একেক রকম নিয়ম, একএকরকম ইতিহাস । পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার কেতুগ্রাম দুই নম্বর ব্লকের এই দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন গ্রামের এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ স্বর্গীয় গোরাচাঁদ ঘোষাল ।
ব্রাহ্মণ পাড়ার সদর বাড়ির দুর্গাপুজোয় এখনও ৪০০ বছরের ঐতিহ্য বজায় রয়েছে । প্রতি বছর দুর্গাপুজোয় ষষ্ঠীর দিন থেকে সদর বাড়ির দুর্গাপুজোর শুভারম্ভ হলেও, মহালয়ার আগে বোধনের তিথি থেকে মায়ের মন্দিরে পুকুর থেকে ঘট ভরে নিয়ে আসেন শরিকেরা । সপ্তমীর দিন সকালে দোলায় করে পুকুরে নিয়ে যাওয়া হয় নবপত্রিকা । কলা বউ স্নান করিয়ে ঢোল ও সানাই বাজিয়ে মন্দিরে নিয়ে আসা হয় ।
ফলমূল, মিষ্টি, লুচি, পায়েস, হাতে গড়া রকমারি নাড়ু সহ হরেক রকমের পদ দিয়ে মাকে ভোগ নিবেদন করা হয় ।
এখানে শাক্ত মতে পূজিত হন দেবী দুর্গা । তাই এখানে বলিদান প্রথাও রয়েছে। সপ্তমী ও নবমীতে আখ ও চালকুমড়ো বলি এবং মহাষ্টমীতে ছাগ বলির প্রথা আছে । অতীতে গোরাচাঁদ ঘোষাল প্রথমে একাই এই সদর বাড়ির দুর্গাপূজার সূচনা করলেও, বর্তমানে নিরোল গ্রামের ব্রাহ্মণ পাড়ার মজুমদার, মুখোপাধ্যায়, চট্টোপাধ্যায় এবং বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সকল সদস্যরা দৌহিত্র সূত্রে এই দুর্গা পূজার শরিক । তাই এখনও প্রতিবছর খুবই জাঁকজমক ও নিষ্ঠা ভাবে এবং ধুমধামের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয় সদর বাড়ির দুর্গাপুজো । মহা অষ্টমী এবং দশমীর দিন সদর বাড়ির বিবাহিত মহিলারা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন । দশমীতে সকলে মিলে স্তবপাঠ করেন সদর বাড়ির পুরুষরা ।
সদর বাড়ির পুজোর এক বিশেষত্ব হল, পুরোহিত, মৃৎশিল্পী, থেকে ঢোল ও সানাই বাদক সহ সকলেই বছরের পর বছর ধরে বংশ পরম্পরায় যুক্ত রয়েছেন এখনও । সদর বাড়ির দুর্গাপুজোর অধিকাংশ শরিকে কর্মসূত্রে গ্রামের বাইরে থাকলেও, পুজোর দিনগুলো গ্রামেই কাটেন । স্থানীয়রাও অংশ নেন । দূর থেকে অনেকেই এই পুজো দেখতে আসেন ।
পুজোর ইতিহাস
কথিত আছে , গ্রামের মানুষদের জলকষ্ট দূর করতে গ্রামের বায়ু কোণে একটি পুকুর খননের সময় সাত পুতুলের একটি চতুর্ভুজা শিলামূর্তি উঠে আসে । তারপর মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ পেয়ে দরিদ্র ব্রাহ্মণ গোরাচাঁদ ঘোষাল ওই চতুর্ভুজা শিলামূর্তিটিকে দুর্গা রূপে পুজো করতে শুরু করেন । পরবর্তীতে কালে কোনও এক অজানা কারণে সেই চতুর্ভুজা শিলামূর্তিটি ভেঙে গেলে, তারপর সেটাকে গঙ্গার জলে নিয়ে গিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয় । তারপর সেই সাত পুতুলের চতুর্ভুজা শিলামূর্তিটির আদলেই মাটির মূর্তি গড়ে তোলা হয় । তারপর থেকে ওই চতুর্ভুজা মূর্তির পুজো হয়ে আসছে ।