যে আশ্চর্য কাশবনের ওপার থেকে ছুটে আসা রেলগাড়ি দেখার স্বপ্নে বিভোর ছিল অপু আর দুর্গা, পথের পাঁচালির সেই নিশ্চিন্দিপুর জীবন্ত হয়ে উঠল এই শারদীয়ায়৷ কলকাতা থেকে অনেকদূরে, আমেরিকার নিউজার্সিতে।
ত্রিনয়নীর এই বছরের পুজোর থিম ছিল বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালি উপন্যাস। এই পুজোয় যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে নিশ্চিন্দিপুর গ্রাম, বইয়ের পাতা থেকে উঠে এসেছে অপু, দুর্গার শৈশব। নিজের ভিটে মাটি থেকে অনেকটা দূরে থাকা মানুষগুলোর মন, এই শরতে পড়ে থাকে নিজের ঘরে, কিন্তু কাজ ফেলে সত্যি সত্যি ঘরে ফেরা হয় ক'জনের? সেই কারণেই থিম হিসাবে বেছে নেওয়া এমন এক কালজয়ী উপন্যাস, যা জড়িয়ে আছে এই জাতির সাংস্কৃতিক শিকড়ে।
প্রতিমা নির্মাণ থেকে শুরু করে সাজসজ্জা, আলপনা দেওয়া- পুজোর যাবতীয় কাজ নিজে হাতে করেছেন সদস্যরা। পেশাগত ব্যস্ততা সামলে, রীতিমতো পরিশ্রম করে প্রবাসীরা দিনের পর দিন একটু একটু করে সাজিয়ে তুলেছেন সাধের নিশ্চিন্দিপুরকে।
খাওয়াদাওয়া, দেদার আড্ডা, গানবাজনা, ছোটদের নাটক- সব মিলিয়ে পুজো এক্কেবারে জমজমাট৷ ছিল জনপ্রিয় বাংলা ব্যান্ড ভূমির পারফরম্যান্স, গান গাইলেন শিল্পী সৌনক চট্টোপাধ্যায়। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে গোটা পুজোজুড়েই যেন ছড়িয়ে ছিল অপু দুর্গার নিশ্চিন্দিপুর। আমরা সবাই আসলে রোজ ফেলে আসছি কিছু না কিছু, কেউ ঘর, কেউ দেশ, কেউ স্মৃতি..। ত্রিনয়নী অন্তত ফিরতে পেরেছে তাঁদের মনের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা অপু-দুর্গার কাছে, তাঁদের স্বপ্নের নিশ্চিন্দিপুরের কাছে, অন্তত একটা বার। এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া।