কথায় আছে, যৌনপল্লীর মাটি ছাড়া দুর্গাপুজো সম্পন্ন হয় না । কিন্তু, সেই যৌনপল্লীর মানুষগুলো আজও সমাজে একপ্রকার ব্রাত্য । আর পাঁচটা মানুষের মতো, পুজো তো তাঁদেরও । সেকথা ভুলে যান অনেকেই । তাই, নিজেদের জন্য নিজেরাই লড়াই করছেন যৌনকর্মীরা । গত কয়েক বছর ধরে দুর্গাপুজোর আয়োজন করছেন তাঁরা । মাঝে বাধা এসেছে অনেক । কিন্তু, লড়াই করে গিয়েছেন । আর দেখতে দেখতে এবার তাঁদের পুজো ১১ বছরে পদার্পণ করল । এবার পুজোয় নিজেদের কথাই বলবেন যৌনকর্মীরা ।
২০১৩ সালে পুজো শুরু । সময়ের সঙ্গে সঙ্গে থিমও ঢুকে পড়েছে সোনাগাছির পুজোয় । এবারের থিম ‘আমাদের পুজো, আমরাই মুখ।’ প্রতিবছর পুজোর আয়োজন করে যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি । তাঁরা জানাচ্ছেন, এবার নিজেরাই নিজেদের কথা বলবেন । তাই, চলতি বছর পুজোর মুখ কোনও তারকা নন, বরং উত্তর কলকাতার দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিট, অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিট, শেঠবাগানের মেয়েরা । ইতিমধ্যে একচালার দুর্গা প্রতিমা এসে গিয়েছে মণ্ডপে । আজ পঞ্চমী । চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি । নিজের হাতেই দুর্গাপুজোর সমস্ত আয়োজন করছেন তাঁরা ।
প্রতিবছর সোনাগাছির পুজোয় সামিল হন রাজনীতি, সিনেমাজগতের তারকারা । এবারও তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে খবর । তবে, পুজোর হোর্ডিংয়ে এবার কোনও তারকা নন,মুখ রয়েছে যৌনকর্মীদের । শুধু কলকাতা নয়, দুর্বারের উদ্যোগে বিষ্ণুপুর, দুর্গাপুর, আসানসোলের যৌনপল্লীতেও পুজো হয় ।
২০১৩ সালে প্রথম বার পুজো হয় । কিন্তু, অনুমতি নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছিল । শেষ পর্যন্ত হাই কোর্টের নির্দেশে পুজোর আয়োজন হয় একটি ছোট ঘরে। পরের বছরও একই সমস্যা । ২০১৫ সালেও পুজোয় বাধা আসে । সেইসময় প্রতিবাদে উৎসবে অংশ নেয়নি সোনাগাছি । পরের বছর আবারও প্রশাসনিক বাধা । শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালে আদালতের নির্দেশে সোনাগাছিতে দুর্বারের অফিসবাড়ির কাছে মসজিদবাড়ি স্ট্রিটের উপরে দুর্গাপুজো করার অনুমতি পান তাঁরা ।