১০ মার্চ। ব্রিগেডে তৃণমূলের জনগর্জন। মঞ্চ থেকে ঘোষণা করা হল রাজ্যের ৪২ লোকসভা আসনে প্রার্থীর নাম। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন বহরমপুর কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম। সেই নাম শুনে গর্জে উঠলেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। চমকে উঠল বাংলার রাজনৈতিক মহল। হ্যাঁ, ঠিক। অধীর-গড়ে তৃণমূলের পাঠান। ভোটের প্রচারে এডিটরজি বাংলার নিউজ এডিটর দেবযানী চৌবের সঙ্গে ভোট-আড্ডা মাতলেন ইউসুফ। উত্তর দিলেন অনেক প্রশ্নের।
দেবযানী : বহরমপুরের অনেক মহিলাকে দেখলাম, তাঁদের জমানো পুঁজি দিয়ে আপনাকে সাহায্য করছেন, কেমন লাগছে আপনার ?
(কিছুক্ষণ চুপ)
ইউসুফ : খুব ভাল লাগছে। অনেক ভালবাসা পাচ্ছি।
(গলা ধরে এল, কালো সানগ্লাসের মধ্যেই দেখা গেল চোখে জল)
দেবযানী : এত ভালবাসা আগে কখনও পেয়েছেন ?
ইউসুফ : বাড়িতে....
(চোখে জল পাঠানের চোখে)
আগে মাঠে নেমে এক অন্য দায়িত্ব ছিল। কিন্তু বাংলার এই জায়গায় এসে যা দেখছি, তাতে সেই দায়িত্বের সঙ্গে এই দায়িত্বের অনেক ফারাক রয়েছে। এখানকার মা-বোনেদের থেকে ভালবাসা আমার দায়িত্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আজও মহিলা এলেন, তাঁদের পুজি আমার হাতে তুলে দিলেন। আমি জানতাম না, নিঃসন্দেহে আমার কাছে এটা বড় প্রাপ্তি। যা আমাকে লড়াই করার সাহস দিচ্ছে। পাশাপাশি আমার দায়িত্বকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই বিশ্বাসের দাম আমায় এবার দিতে হবে। কারণ, এই ভালবাসা আমার কাছে রসদ। মাঝে মাঝে ভয় হচ্ছে কী ভাবে আমি এই দায়িত্ব পালন করব ? আমি এই প্রশ্ন এখন আমাকেই করছি। একজন মা, একজন বোন, তাঁদের সংসারে টাকা আমার হাতে তুলে দিচ্ছেন, শুধুমাত্র আমি যাতে ভোটে লড়াই করতে পারি। ভাবতে পারছেন, এটা কত বড় দায়িত্ব আমার উপরে ! এবার আমার তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়ার পালা। তাই ভাবছি দিদি আপনি আমায় কোথায় ফাঁসিয়ে দিলেন ? কারণ, এটা অনেক বড় দায়িত্ব। এতদিন ভাবছিলাম আমি জিতে যাব। কিন্তু শুধু জিতে গেলে হবে না, আমায় এই মানুষগুলো জন্য কাজ করতে হবে। তাঁদের জন্য লড়াই করতে হবে। কিন্তু আজ আমায় যে দায়িত্ব দেওয়া হল, তাতে ভয় হয়, এই কাজ কী আমি সম্পূর্ণ ভাবে করতে পারব ? যদি না পারি, তাহলে ভগবানকে কী জবাব দেব।
দেবযানী : তাহলে কী টেনশন হচ্ছে ?
ইউসুফ : টেনশন হচ্ছে না। কিন্তু ভালবাসা যেন দায়িত্বকে বাড়িয়ে দিল। কারণ, আর যাই করিনা কেন, আমাকে কাজ করতে হবে।
দেবযানী : ভালবাসা তো দায়িত্বের অঙ্গ, তাই না...
ইউসুফ : একদম ঠিক। কিন্তু এতবড় দায়িত্ব কখনও আসেনি। জীবনে এত বড় দায়িত্ব নিইনি। বাড়িতে আমার দায়িত্ব আছে। সেই বাড়ির কাজের অঙ্গ। এখানে মা-বোনদের দায়িত্ব আমার কাঁধে। তাঁদের বাড়ির দায়িত্ব এখন আমার কাঁধে।
দেবযানী : আপনি যখন ক্রিকেটার ছিল, তখন দেশবাসীর প্রত্যাশার দায়িত্ব আপনাকে নিতে হত ?
ইউসুফ : ক্রিকেট একটা অন্য জগৎ। তার সঙ্গে এই ময়দানের কোনও মিল নেই। ক্রিকেটের মাঠে একবার নামার পর আপনার জয় খিদে বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এই ময়দানে শুধু জয় নয়, জয়ের পরেও অনেক কাজ থাকে। এবং সেই কাজ আমাকে করতে হবে।
দেবযানী : রাজনীতিতে আসার কারণ কী ? তৃণমূল নেত্রী কি আপনাকে প্রথম প্রস্তাব দেন ?
ইউসুফ : হ্যাঁ, আমি দিদির কাছ থেকে প্রথম প্রস্তাব পেয়েছিলাম। রাজনীতিতে আসব কখনও ভাবিনি। কিন্তু দিদির প্রস্তাব আমি ফেরাতে পারিনি। তবে, আমি কোনও দিন রাজনীতিতে কাজ করিনি। সত্যি বলছি, রাজনীতি নিয়ে আমার কোনও আগ্রহ ছিল না। তবে ভেবেছিলাম, সুযোগ পেলে মানুষের জন্য কাজ করব।
দেবযানী : বাঙালি খাবার খাচ্ছেন....
ইউসুফ : হ্যাঁ খাচ্ছি। যেদিন থেকে বহরমপুরে এসেছি, সেদিন থেকে আমি বাঙালি খাবার খেয়ে নিজেকে অভ্যস্থ করছি। যাঁদের বাড়ি যাচ্ছি, তাঁরা আমায় মাছ খাওয়াচ্ছেন।
দেবযানী : কী পছন্দ...
ইউসুফ : আমার সব কিছু ভাল লাগে। বিশেষ করে এখানকার মাছ আমার খুব ভাল লাগে।
দেবযানী : বাংলা ভাষা শিখছেন ?
ইউসুফ : অল্পসল্প শিখছি।
দেবযানী : কী কী শিখলেন...
ইউসুফ : লোকের সঙ্গে কথা বলে শিখছি কেমন আছ ? ভাল আছো...আমি তোমায় ভালবাসি.....
দেবযানী : খেলা হবে শিখেছেন...
ইউসুফ : খেলা হবে শিখেছি। কারণ বাংলার মানুষ খেলা পাগল।
দেবযানী : কোন এমন একটা বিষয়, যা আপনি রোজ করেন ?
ইউসুফ : এই একটাই কাজ আমি রোজ করি। মানুষের থেকে আশীর্বাদ নিই, তাঁদের ভালবাসা গ্রহণ করি। আগে বাবা-মার আশীর্বাদ নিতাম। যবে থেকে এই ময়দানে এসেছি, তবে থেকে আমি মানুষের ভালবাসা নিচ্ছি।
দেবযানী : জেতার পর বহরমপুরের মানুষের জন্য কোন কাজটা আগে করবেন ?
ইউসুফ : অনেক কাজ রয়েছে। ছোটদের জন্য আমি এখানে একটা স্পোর্টস অ্যাকাডেমি তৈরি করব। যুবকদের স্বপ্ন সফল করার জন্য আমার চেষ্টা থাকবে।
দেবযানী : ইরফান পাঠান না ইউসুফ পাঠান, মায়ের আদুরে কে ?
ইউসুফ : মায়ের আদুরে আমি, বাবার আদুরে ইরফান।
দেবযানী : প্রচারে কেমন রেসপন্স পাচ্ছেন ?
ইউসুফ : খুবই ভাল রেসপন্স পাচ্ছি। দেখুন যখন ভারতের জন্য খেলছি তখন অন্যরকম ভালবাসা পেয়েছি। তবে এবার অন্যরকম ভালবাসা পাচ্ছি। এই ভালবাসার মধ্যে মানুষের আমার প্রতি অন্যরকম প্রত্যাশা রয়েছে। সেই প্রত্যাশা আমার পূরণ করতে হবে।
দেবযানী : খেলা হবে....
ইউসুফ : খেলা হবে...হবে হবে..
দেবযানী : কবে হবে ?
ইউসুফ : হবে...১৩ মে খেলা হবে।