শনিবার লোকসভা ভোটের শেষ দফা। ভোট কলকাতা সহ দুই চব্বিশ পরগণায়। মোট ৯টি কেন্দ্রে সপ্তম দফায় ভোট রয়েছে মোট ১৭ হাজার ৪৭০ টি বুথে। এরমধ্যে স্পর্শকাতর ৩ হাজার ৪৪৮টি বুথ। নির্বাচনে অশান্তি ঠেকাতে বাংলায় নামছে মোট ৯৬৭ কোম্পানি বাহিনী। এছাড়া মোট ১৩ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকছে স্ট্রং রুমের নিরাপত্তায়।
এদিন রাজ্যের মোট ৯ কেন্দ্রে জোরদার লড়াই করবেন কোন হেভিওয়েটরা? সপ্তম দফার ভোটের আগে এক নজরে এই দফার উল্লেখযোগ্য প্রার্থীরা।
ডায়মন্ড হারবার: বাংলার এই কেন্দ্র এখন তৃণমূলের দুর্জেয় ঘাঁটি। এমনটাই দাবি করেছেন এই কেন্দ্রের এবং এই দফার সবচেয়ে বড় হেভিওয়েট মুখ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর চ্যালেঞ্জ এই কেন্দ্র থেকে এবার তাঁর মার্জিন হবে ৪ লক্ষ। তবে, এই কেন্দ্রকে নিয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন আইএসএফের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। হেভিওয়েট এই কেন্দ্র থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি। তবে সেই হুংকার এখন বিশ বাওঁ জলে। ২০১৪ থেকে এই কেন্দ্রের হাল ধরেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার তাঁর বিরুদ্ধে, কঠিন লড়াইয়ে নেমেছেন বামেদের প্রতীক উর রহমান।
যাদবপুর : রাজ্য রাজনীতিতে সব সময়ই বিশেষ নজর থাকে এই কেন্দ্রের উপর। প্রবাদ রয়েছে, এই কেন্দ্র তারকা তৈরি করে আবার ইন্দ্রপতনেও বিশেষ সময় নেয় না যাদবপুর। একদা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়দের এই কেন্দ্র ৫ বছর আগে সাংসদ হিসেবে পেয়েছিল অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীকে। এবারেও ওই কেন্দ্রে, তৃণমূলের তুরুপের তাস একজন অভিনেত্রীই। তবে এই অভিনেত্রী যে আগের সাংসদের থেকে আলাদা, তা ইতিমধ্যেই বুঝিয়ে দিতে শুরু করেছেন তৃণমূলের প্রার্থী সায়নী ঘোষ। এই কেন্দ্রে, বামেদের হৃত গৌরব ফেরাতে লড়ছেন যুব নেতা সৃজন ভট্টাচার্য। পরিপাটি ব্যবহার, সংযত মন্তব্য, নিপাট সাজপোশাকের এই ‘গুড বয়ের’ উপর বামেদের প্রত্যাশা অনেকটাই। রয়েছেন বিজেপির বুদ্ধিজীবী অনির্বান গঙ্গোপাধ্যায়ও।
দমদম: একটা সময় দমদম ছিল বামেদের মর্যাদার দূর্গ, নেপথ্যে সুভাষ চক্রবর্তী। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এই কেন্দ্রে চলত সুভাষ রাজ। তবে রাজ্যে পালাবদলের আগে দমদমে ঘাসফুল ফুটিয়েছিলেন সৌগত রায়। প্রথমবার জিতেছিলেন মাত্র ২০ হাজার ভোটে। সেই থেকে ধারাবাহিকভাবেই এই আসনে ক্রমেই বেড়েছে বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতার দাপট। এবারেও দমদম থেকে তৃণমূলের টিকিটে লড়ছেন সৌগতই, তাঁর কঠিন প্রতিপক্ষ অবশ্যই সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী এবং বিজেপির শীলভদ্র দত্ত।
কলকাতা দক্ষিণ: কলকাতা দক্ষিণের এই কেন্দ্র এবার বিশেষ নজরে। নারীশক্তির ত্রিমুখী লড়াই দেখতে অপেক্ষায় রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবন এই কেন্দ্রের অন্তর্গত। বাংলার রাজনৈতিক মহল দাবি করে কলকাতার এলিট এই কেন্দ্রে এখনও ভোট হয় তাঁর নামেই। পাঁচ বছর আগে এই কেন্দ্র থেকে প্রথমবার সাংসদ মালা রায়। এবারও তিনি তৃণমূলের আস্থা তিনিই। তাঁর বিপরীতে সিপিএমের মুখ সায়রা শাহ হালিম। রায়গঞ্জের জয়ী প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরীকে এবার কলকাতা দক্ষিণ জয়ের দৌড়ে প্রার্থী হিসাবে টিকিট দিয়েছে বিজেপি।
কলকাতা উত্তর: সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, তাপস রায় এবং প্রদীপ ভট্টাচার্য। কলকাতা উত্তরের দেওয়ালে দেওয়ালে এখন এই তিন নামই ঝলমল করছে। ২০০৯ সালে জন্ম হয় কলকাতা উত্তরের। সেই তখন থেকে এ যাবৎ এই কেন্দ্রের সাংসদ তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। হাজার বিতর্ক, চর্চা সমালোচনার পরেও তিনি এই কেন্দ্র থেকে হ্যাট্রিক করে দেখিয়েছেন। এইবারের ভোটে নিঃসন্দেহে তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূলকে হাতের তালুর মতো চেনা, এবারের বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়।
বসিরহাট: এবার রাজ্য রাজনীতির স্পটলাইট সন্দেহখালি। এইবারের ভোটে তাই বসিরহাট কেন্দ্র পাখিরচোখ মোটামুটি সব দলেরই। স্বাধীনতার পর থেকেই বসিরহাট কখনও বাম আবার কখনও কংগ্রেসের। ১৯৮০ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত এই কেন্দ্র ছিল সিপিআইয়ের দূর্গ। তবে ২০০৯ সালে এই সিট দখল করেন তৃণমূলের হাজি নুরুল। তারপর পর পর দুইবছর আর এই কেন্দ্রে তাঁকে প্রার্থী করেনি তৃণমূল। যদিও নুসরত জাহানের পর এবার আবার এই কেন্দ্রের প্রার্থী হাজি নুরুল। বিজেপির তুরুপের তাস রেখা পাত্র। আর বামেদের হয়ে লড়ছেন নিরাপদ সর্দার।
বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে সপ্তম দফায় আরও এমন অনেক কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে নজর থাকবে গোটা দেশের। সেই কেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম উত্তরপ্রদেশের বারাণসী। যেখানে হ্যাট্রিকের অপেক্ষায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর পাশাপাশি নজর হিমাচলের মান্ডির দিকেও। পাহাড়ি এই কেন্দ্রে এবার ভোট অভিষেক হচ্ছে বলি ক্যুইন কঙ্গনার।