চলছে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসব। লোকসভা নির্বাচন ২০২৪। ঘটনাবহুল ভোট আবহে রোজ নিত্য নতুন বিষয় কাড়ছে শিরোনাম। কখনও দাবদাহ, কখনও বৃষ্টি কখনও বা কালবৈশাখী মাথায় নিয়েই বঙ্গের ভোট ময়দানে জোরদার প্রচার চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। কেউ এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত বিরামহীনভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা। রোজ মিশে যাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে। ক্যামেরার ঝলকানি সামলিয়ে নাগাড়ে ইন্টারভিউ দিয়ে চলেছেন প্রার্থীরা। এরমধ্যেই নজর কাড়ছে বং-নেত্রীদের ফ্যাশন।
রাজনীতিতে ফ্যাশন নিয়ে কথা হবে আর তিনি বাদ থাকবেন তা কী করে হয়! তাই শুরু থেকেই শুরু করা যাক।
ভারতীয় রাজনীতি আটপৌড়ে। এই প্ৰবাদকে নিজের সাজ এবং আতিশয্যে দূরে ঠেলে দিতে পেরেছিলেন একজন। ভারতীয় রাজনীতিতেও যে রঙ ঢালা যায়, এবং তা যে সার্বিকভাবে রঙিন হতে পারে তিনি দেখিয়েছিলেন। সময়টা কঠিন ছিল, কারণ তখনও ভারতীয় রাজনীতি ছিল আগাগোড়া পুরুষ শাসিত। সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়েই তাঁর সাজ মুগ্ধ করেছিল তাবড় রাষ্ট্রনায়কদের। শাড়িতে, ভারতীয় নারী: দেশের রাজনীতিতে তিনি পথ দেখিয়েছিলেন। সাদা কালো বব কাট, কালো রোদ চশমা, এবং মাথায় ঘোমটা, সাথে গমগমে গ্ল্যামার- তিনি প্রিয়দর্শিনী। সারা বিশ্ব তাঁকে চেনে ইন্দিরা গান্ধী নামে। আজও তাঁর স্টাইল স্টেটমেন্ট চর্চিত।
ভোট আবহে বং বিউটিরাও কিন্তু সাজ-গোজে কম যাচ্ছেন না। এ বলে আমায় দেখ, তো ও বলে আমায়। এবছর বঙ্গ নির্বাচনে লড়ছেন একাধিক তারকা প্রার্থী , আবার কেউ কেউ তারকা না হয়েও স্টাইল স্টেটমেন্ট-এ তথাকথিত ‘নায়িকা’দেরও বলে বলে গোল দিচ্ছেন।
কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মিত্র, তাঁর সাজ থেকে ‘রাজ’ সবই বেজায় চর্চিত। নাম ঘোষণার পর থেকেই তিনি কোমড় বেঁধে ভোট ময়দানে। অধিকাংশ সময় চুল খোলাই রাখেন মহুয়া, হালকা রঙের সরু পাড়ের শাড়ি, সঙ্গে ছোট্ট টিপ আর ওভারসাইজড সানগ্লাস। চড়া রোদে কখনও কখনও মাথায় টেনে নিচ্ছেন ঘোমটা। আর তাতেই যেন কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে মহুয়ার বিউটি।
যাদবপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষ। রাজনীতিতে পা রাখার আগে, তাঁর পরিচিতি ছিল অভিনেত্রী হিসেবেই। কিন্তু এখন তাঁর সঙ্গে জুড়েছে নেত্রী শব্দটাও। সায়নী বিরামহীনভাবে প্রচার চালাচ্ছেন যাদবপুরের অলিতে-গলিতে। কখনও চিকনকারির কুর্তি, কখনও বা নরম সুতির শাড়ি। ‘কমফর্ট’ ফ্যাশনেই আস্থা রেখেছেন তিনি। গরমে উঁচু করে বাঁধছেন টপ নট, পায়ে থাকছে চপ্পল। উত্তরীয় বা মানানসই ওড়না থাকছে সঙ্গে, হাতে থাকছে স্টিলের ওভারসাইজড একটি ঘড়িও।
শ্রীরামপুরের বাম প্রার্থী দীপ্সিতা ধর। দীর্ঘদিন রাজধানীতে লেখাপড়া করেছেন তিনি। সাজগোজ নিমিত্ত তাঁর, কিন্তু তবুও তাতে রয়েছে চমক। খুব গরম না হলে, ঢেউ খেলানো চুল খোলাই রাখেন তিনি। সঙ্গে লাল টিপ, আর খয়েরী লিপস্টিক। কানে, গলায় কিচ্ছুটি থাকে না তাঁর। তবে ডান হাতে ঘড়ি কিন্তু মাস্ট।
আসানসোল কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পল, রাজনীতিতে আসার আগে প্রসিদ্ধ ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে তাঁর বেজায় নাম ডাক ছিল। তাই বলাই বাহুল্য সাজতে জানেন তিনি। প্রচারে শাড়ি পরছেন অগ্নি, সবসময়ই মাথায় থাকছে খোঁপা আর তাতে জড়ানো ফুলের মালা বা গাজরা। সঙ্গে বড় করে সিঁদুরের টিপ, মুখে থাকছে হালকা মেকআপ-ও।
মান-অভিমানের পালা মিটিয়ে, বরাহনগর বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন লড়ছেন অভিনেত্রী তথা তৃণমূল প্রার্থী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনিই তাঁর ফ্যাশন সেন্স নজরকাড়া। ভোট আবহে প্রচারে তিনি বেশিরভাগ সময়েই সাদা পরছেন। সে শাড়ি হোক বা কুর্তি। চুল খোলাই থাকছে, তবে গরম লাগলে চুল বেঁধে নিতে হাতে থাকছে রাবার ব্যান্ডও। রোদ চশমাও ক্যারি করছেন সায়ন্তিকা।
অন্যদিকে, দক্ষিণ কলকাতার সিপিএম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম। ভোট প্রচারে কখনও তিনি পরছেন শাড়ি কখনও বা কুর্তি। হালকা কাজল, আর হালকা রঙের লিপস্টিকে দক্ষিণ কলকাতার প্রার্থীও কাড়ছেন নজর।
ফ্যাশনের কথা হচ্ছে যখন, মেদিনীপুরের তৃণমূল প্রার্থী জুন বাদ যান কীভাবে? অভিনেত্রী-বিধায়ক ভোট প্রচারে শাড়িই পরছেন। বাঁ-হাতে থাকছে একগুচ্ছ ব্রেসলেট এবং ঘড়ি। নানা রকমের হালকা সুতির শাড়ির সঙ্গে পেয়ার করছেন ছোট ছোট কানের দুল, আর হার। তাঁর ক্যাট আই শেপের চশমাও থাকছে চোখে। সবমিলিয়ে ভোট আবহে বং-নেত্রীদের ‘কেতা’ কিন্তু চোখে পড়ার মতো।