দক্ষিণবঙ্গে তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস থাকলেও উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া থাকবে মনোরম। এমনটাই জানিয়েছিল আবহাওয়া দফতর। ছিলও তাই। কিন্তু রাজনীতির পারদ যে এতটা চড়বে সেটা কে জানত? গেরুয়া আর ঘাসফুল শিবিরের ব্য়াক টু ব্যাক সভা রোড শোতে প্রমাণিত কেউ কাউকে রাজনীতির ময়দানে একচুলও জায়গা ছেড়ে দিতে রাজি নয়।
প্রথমদফার ভোট গ্রহণ রয়েছে ১৯ এপ্রিল। ওই দিন উত্তরবঙ্গের তিন কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ করা হবে। তার মধ্যে রয়েছে আলিপুরদুয়ার কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ি। তিনটি কেন্দ্রই নিজেদের ঝুলিতে ভরতে প্রচারের ঝড় তুলে দিয়েছেন মমতা থেকে অভিষেক অন্যদিকে মোদী থেকে অমিত শাহ।
প্রথম দফায় যে তিনটি কেন্দ্রে ভোট হবে ওই তিনটি কেন্দ্র থেকেই ২০১৯ সালের নির্বাচনে জিতেছিল বিজেপি। কোচবিহার থেকে জয়লাভ করেছিলেন নিশীথ প্রমাণিক, জলপাইগুড়ি থেকে জয়ন্ত কুমার রায় এবং আলিপুরদুয়ারে জয়ী হয়েছিলেন জন বার্লা। সেকারণে আসন্ন নির্বাচনে আলিপুরদুয়ার ছাড়া বাকি দুই কেন্দ্রের পার্থী বদল করেনি গেরুয়া শিবির। আলিপুরদুয়ারের প্রার্থী বদল করে করা হয়েছে মনোজ টিগ্গাকে।
অন্যদিকে তৃণমূলের হয়ে আলিপুরদুয়ার থেকে এবারের নির্বাচনে লড়ছেন প্রকাশ চিক বরাইচ, কোচবিহারের প্রার্থী হয়েছেন জগদীশ চন্দ্র বাসুনিয়া এবং জলপাইগুড়ির টিকিট পেয়েছেন নির্মল চন্দ্র রায়।
তৃণমূল-BJP-র প্রচার-
এক বাক্যে বলতে গেলে, তৃণমূল এবার পাখির চোখ করেছে উত্তরবঙ্গের এই তিনটি কেন্দ্রকে। আর সেকারণে প্রচারের দিনগুলিতে মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৯, ১০ তারিখ বাদ দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই তিনি উত্তরবঙ্গের ওই তিন কেন্দ্রে চষে বেড়িয়েছেন। বাদ যাননি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের তিনটি কেন্দ্রে নির্বাচনী প্রচার সারতে একাধিকবার পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দিল্লি থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল রাজনাথ সিংকেও।
কেন এই তিনটি কেন্দ্রে জোর?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, উত্তরবঙ্গ বারবার ফিরিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। চাবাগানের উন্নতি থেকে শুরু করে, রাজবংশীদের উন্নয়ন, পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্রগুলিকে ঢেলে সাজিয়েছেন বলে দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু উত্তরবঙ্গবাসী এখনও মনে করেন পাহাড় এখনও 'দুয়োরানি'। শত চেষ্টাতেও মমতা সেই অভিমান ভাঙাতে পারেননি বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এর পিছনে একটা বড় কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁদের ধারণা রায়গঞ্জের প্রস্তাবিত AIIMS-কে নদিয়ার কল্যাণীতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তখন থেকেই তৃণমূল নেত্রীর প্রতি গোঁসা করে রয়েছেন উত্তরবঙ্গবাসী। অন্যবারের মতো এবারও মমতা সেই রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করেছেন। একাধিক উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন তাঁর প্রতিটি বক্তৃতায়। অন্যদিকে রেল সহ উত্তরবঙ্গের জন্য বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের খতিয়ান তুলে ধরেছে BJP নেতৃত্ব তথা নরেন্দ্র মোদী। এখন দেখার মমতার কথায় চিড়ে ভিজেছে নাকি গেরুয়া শিবিরেই ভরসা রেখেছে উত্তরবঙ্গ। উত্তর মিলবে ৪ জুন।