রেল নিয়ে লড়ালড়ি। এক লাইনে বলতে গেলে এনডিএ জোটের বিহারের নেতাদের মধ্যে এখন ঠিক এটাই হচ্ছে। জনতা দল ইউনাইটেড নেতা তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার রেলমন্ত্রকের দাবি জানিয়েছেন৷ আবার লোকজনশক্তি পার্টির নেতা চিরাগ পাশোয়ানও রেলমন্ত্রক চান৷ নীতিশ প্রাক্তন রেলমন্ত্রী ছিলেন। চিরাগের বাবা প্রয়াত রামবিলাস পাশোয়ানও রেলমন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন৷ আবার রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা লালুপ্রসাদ যাদবও রেলমন্ত্রী ছিলেন। লালুর আমলে লাভের মুখ দেখেছিল ভারতীয় রেল।
প্রশ্ন হল, বিহারের রাজনৈতিক নেতাদের রেলমন্ত্রকের প্রতি এত আগ্রহ কেন? স্বাধীনতার পর থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ৮ জন রেলমন্ত্রী পেয়েছে বিহার। বাবু জগজীবন রামের (১৯৬২) মতো বিখ্যাত নেতা যেমন রেলমন্ত্রী হয়েছেন বিহার থেকে, ঠিক তেমনই কখনও রাম সুভাগ সিং (১৯৬৯), কখনও ললিত নারায়ণ মিশ্র (১৯৭৩), কখনও কেদার পান্ডে (১৯৮২) রেলমন্ত্রকের দ্বায়িত্ব সামলেছেন৷ বিশিষ্ট সোস্যালিস্ট নেতা জর্জ ফার্নান্দেজও (১৯৮৯) রেলমন্ত্রী হয়েছে। এছাড়া রাম বিলাস পাশওয়ান (১৯৯৬), নীতীশ কুমার (১৯৯৮ ও ২০০১) এবং লালু প্রসাদ যাদব (২০০৪) তো হয়েছেন বটেই।
আসলে সংগঠন বাড়াতে রেল মন্ত্রকের বিকল্প নেই। রামবিলাস যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি নিজের রাজনৈতিক দুর্গ হাজিপুরে রেলওয়ে জোন তৈরি করেছিলেন। তার মাধ্যমে সাংগঠনিক লাভও হয়েছিল বিস্তর। লালুর আমলেও রেলে বিপুল সংখ্যক মানুষ চাকরি পেয়েছিলেন। বিরোধীরা অভিযোগ করেন, লালু নাকি চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বজনপোষণ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর রেলমন্ত্রীত্ব যে আরজেডি-কে সাংগঠনিক শক্তি জুগিয়েছিল বিস্তর, তা তো মানতেই হবে৷ একই কথা প্রযোজ্য নীতিশের ক্ষেত্রেও। অটল বিহারী বাজপেয়ীর আমলে রেলমন্ত্রী ছিলেন নীতিশ। এবারও তাঁর দাবি বেশ শক্তিশালী। কারণ আসনসংখ্যার বিচারে এনডিএ জোটের তৃতীয় বৃহত্তম দল জেডিইউ।
রেলমন্ত্রীত্ব নিয়ে এর আগেও বিহারের নেতারা লড়ালড়ি করেছে। ইউপিএ জমানায় কে রেলমন্ত্রী হবেন, তা নিয়ে লালু এবং রামবিলাসের মধ্যে প্রবল মনকষাকষি হয়েছিল। এবারও সমস্যা সহজে মিটবে কি? সাম্প্রতিককালে রেলের বাজেট বাড়িয়ে ২.৫ লক্ষ কোটি টাকা করা হয়েছে। ফলে রীতিমতো আকর্ষণীয় মন্ত্রক হল রেল।
এখনও পর্যন্ত ভারত মোট ৪০ জন রেলমন্ত্রী পেয়েছে। স্বাধীনতার পর জওহরলাল নেহেরুর মন্ত্রীসভায় প্রথম রেলমন্ত্রী হয়েছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জন মাথাই। তারপর দায়িত্ব নেন এন গোপালস্বামী আয়েঙ্গার। রেলমন্ত্রক যে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা যায় লালবিহারী শাস্ত্রী, জগজীবন রাম, শরণ সিং, এস কে পাটিল, কমলাপতি ত্রিপাঠী, মধু দণ্ডবতের মতো নেতারা এই মন্ত্রক সামলানোয়। বাংলা থেকেও চারজন রেলমন্ত্রী হয়েছেন- এ বি এ গনিখান চৌধুরী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুকুল রায় এবং দীনেশ ত্রিবেদী। এর মধ্যে গনি এবং মমতার রেলমন্ত্রীত্ব বহুচর্চিত। গনি দুদফায় রেলমন্ত্রী ছিল। একবার ২৬ মাস, আরেকবার মাস দুয়েক৷ মমতাও দুদফায় রেলমন্ত্রক সামলেছেন। প্রথমবার ১৭ মাস। দ্বিতীয়বার দুবছর। ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়েন মমতা।
মমতার আমলে বাংলা বিপুল উপকৃত হয়েছিল রেল বাজটে। অন্তত তৃণমূলের তরফে এমনই দাবি করা হত। বিজেপি সহ বিরোধী শিবিরের অভিযোগ ছিল, রাজ্যে রাজনৈতিক লাভ পেতেই বাংলার জন্য একের পর এক প্রকল্প বরাদ্দ করতেন মমতাম সেই সময় রেলের বহু কমিটিতে 'পরিবর্তনপন্থী বুদ্ধিজীবীরাও' জায়গা পেয়েছিলেন।